বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মেলা পরিপত্র, ২০২২’-কে উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাণিজ্যমেলা আয়োজনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃহত্তর সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইতোপূর্বে ১৪টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা সফলভাবে আয়োজন করেছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতা ও সিলেট শহরে উপযোগী মাঠ বরাদ্দ না পাওয়ায় সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
চেম্বার সভাপতি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন বর্তমানে শাহজালাল উপশহরস্থ ‘আই’ ব্লক খেলার মাঠে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মেলা পরিপত্র, ২০২২’ (নম্বর- ২৬.০০.০০০০.১০৬.৮৬. ০৮৬.১৫.১১১ তারিখ: ২৯ জুন ২০২২) এর ২ (ক) এবং (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ব্যতীত বাংলাদেশের যেকোনো বিভাগীয়, জেলা বা উপজেলা শহরে বাণিজ্যমেলা আয়োজনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট জেলার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বরাবরে ৫০০ (পাঁচশত) টাকা ফি, সরকারি কোষাগারে পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৪ এ বর্ণিত ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করতে হয়। সে প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট জেলা চেম্বারের সুপারিশ ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগের মতামত গ্রহণ করে পরিপত্রের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে মেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করতে পারেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, উপশহর আই ব্লক মাঠে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্যমেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে সিলেটের জেলা চেম্বার ‘দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-কে অবগত করা হয়নি এবং সুপারিশও গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরের যৌথ উদ্যোগে আমরা রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও সরকারের সহযোগী সংগঠন হিসেবে এ লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের সাথে সিলেটের বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রতি বছর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স ও ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আমরা সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে আসাম, মেঘালয়সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্মেলনে যোগদান করি। কিন্তু উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমরা ভারতীয় ব্যবসায়ীগণকে সিলেটে কোনো প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানাতে পারি না। তাই আমরা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মাসব্যাপী সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা এবং একই সাথে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সে লক্ষ্যে আমরা সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের লক্ষ্যে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ অথবা শাহী ঈদগাহস্থ শেখ রাসেল স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র প্রেরণ করি। একই তারিখে আমরা সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ অথবা শাহী ঈদগাহস্থ শেখ রাসেল স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ প্রাপ্তির লক্ষ্যে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বরাবরে পত্র প্রেরণ করি। সিলেট চেম্বারের পত্রের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে মাঠ বরাদ্দের ব্যাপারে মতামত চেয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের পত্রের প্রেক্ষিতে এসএমপি’র নগর বিশেষ শাখা থেকে গত ৬ অক্টোবর বাণিজ্যমেলা আয়োজনের জন্য শাহী ঈদগাহস্থ শেখ রাসেল স্টেডিয়াম বরাদ্দের ব্যাপারে সম্মতিসূচক পত্র প্রেরণ করা হয়। এছাড়া মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় গত ৭ নভেম্বর মাঠ বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে সুপারিশ করেন। কিন্তু এসএমপি’র সম্মতিসূচকপত্র ও মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুপারিশের পরেও জেলা প্রশাসক মাঠটি সিলেট চেম্বারকে বরাদ্দ প্রদান করেননি।
তাহমিন আহমদ বলেন, পরবর্তীতে আমরা সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের লক্ষ্যে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়ার লক্ষ্যে গত ২০ অক্টোবর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পত্র প্রেরণ করি এবং সিলেট চেম্বারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ১ ডিসেম্বর মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বরাবরে মাঠটি সিলেট চেম্বারকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। এছাড়া বাণিজ্যমেলা ও বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে ১৬ অক্টোবর, ৩১ অক্টোবর ও ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক সিলেট চেম্বারের পত্রের কোনো জবাব দেননি। জেলা প্রশাসকের এরকম অসহযোগিতার ব্যাপারে আমরা গত ১৪ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করি এবং পত্রের কপি মহাপরিচালক, বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগকে প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-৭ শাখা থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের লক্ষ্যে ‘মেলা পরিপত্র, ২০২২’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারপরও সিলেট চেম্বারকে মেলা আয়োজনের জন্য মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে একটি সংগঠনকে শাহজালাল উপশহর ‘আই’ ব্লক খেলার মাঠে বাণিজ্যমেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, প্রশাসন যে ক্ষমতাবলে অন্য একটি সংগঠনকে খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করেছেন, সেই ক্ষমতাবলে সিলেট চেম্বার অব কমার্সকে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে মেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করা হোক।
তিনি বলেন, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি স্থানীয় এসএমই ও নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি, শিল্পায়নের প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করে থাকে। এছাড়া বাণিজ্যমেলা থেকে প্রাপ্ত রয়্যালিটি দিয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স ব্যবসায়ী ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি, সভা-সেমিনার, নবীন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এগিয়ে নিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিকল্পনা অনুযায়ী সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট একসাথে আয়োজন করা গেলে এখানে ভারতের সেভেন সিস্টারের উদ্যোক্তাগণ তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে যেমন অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তেমনি স্থানীয় উদ্যোক্তাগণও তাদের উৎপাদিত পণ্য ভারতীয় আমদানিকারকদের নিকট প্রদর্শন করতে পারবেন। এতে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক জোরদার হবে।
চেম্বার সভাপতি বলেন, উপশহর ‘আই’ ব্লক খেলার মাঠে যেরকম বাণিজ্যমেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, সেভাবে শাহী ঈদগাহস্থ শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের লক্ষ্যে মাঠটি বরাদ্দ প্রাপ্তিতে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাগণ কর্তৃক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ও আইন-কানুনগুলো যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় সে ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।