বছরের প্রথম দিনে হাতে নতুন বই। চোখে আনন্দের ঝিলিক। মুখে উচ্ছ্বাস। কারো চোখ চকচকে মলাটে আবার কেউ নাড়াচাড়াতেই ব্যস্ত। নতুন বই হাতে পেয়ে বাঁধভাঙা উল্লাস। এভাবেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে নগরীর বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও বর্ণমালা সরকারী প্রার্থমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এসময় মেয়র বলেন, বাঙালির অনেক উৎসবের ঐহিত্য আছে, সেই উৎসবের সাথে এখন নতুন যুক্ত হয়েছে বই উৎসব। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, আর নতুন বইয়ের উৎসব। শিক্ষার্থীগণ বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে আনন্দে ঊচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জগদীশ চদ্র দাসের সভাপতিত্বে ও স্কুলের সহকারী শিক্ষক শিমুল চক্রবর্তীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান, মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেবেকা বেগম রেনু, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম নজু, অনিল কৃঞ্চ মজুমদার, শিক্ষা কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন দাস, সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর, শিক্ষা কর্মকর্তা তুতিউর রহমান, এপিএস শহিদ চৌধুরী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্জুন চন্দ্র দাস, আমিরুল ইসলাম, হাজী সেলিম, নুরুজ্জামান শাহজানসহ নেতৃবৃন্দ।
মেয়র আরো বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। একসময় বছরের শুরুতে বই পাওয়া যেত না। শিক্ষার্থীদের পুরাতন বই সংগ্রহ করে ক্লাসে যেতে হতো। অনেক পরিবার তার সন্তানের জন্য বইয়ের ব্যবস্থা করতে পারতো না। সে কারণে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে পিছিয়ে যেতো এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বৈষম্য তৈরি হতো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১০ সাল থেকে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দিয়ে বৈষম্য দূর করেন এবং শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। মেয়র প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এজন্য সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে অভিবাদন জানান।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের মাঝে সারাদেশে আজ কোটি লাখ বই বিতরণ করে অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশকে উন্নতির শিখরে নিতে হলে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ পাঠদান, মূল্যায়ন ও অভিভাবকদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি সিলেট জেলার ৯ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ জন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৫টি বই বিতরণ করা হয়।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মহসিনুর রহমান জানান- তাদের আওতায় মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসায় (দাখিল পর্যন্ত) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০১ জন। বছরের প্রথম দিনে তাদের ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৮২০টি বই তুলে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী ও মাদ্রাসায় (দাখিল পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদা ছিল সামান্য একটু বেশি। প্রায় শতভাগ বইই চলে এসেছে। যে সামান্য বাকি ছিল সেগুলো প্রতিদিনই আসছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত এরশেদ জানান, জেলায় প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে বইয়ের চাহিদা ছিল ২৩ লাখ ৪১ হাজার ১৬৫টি। এরই মধ্যে শতভাগ বই চলে এসেছে। যেগুলো বছরের প্রথম দিন থেকে বিতরণ শুরু হয়।
এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ৪ কোটি ৯ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে বেশিরভাগই ছাপা হয়ে গেছে।
এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী মিলিয়ে এই স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষার বই ছাপা হচ্ছে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭ কপি বই।