সিলেটে তৃণমূল আ.লীগে বিতর্কের মুখে অধ্যাপক জাকির

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ডে ঘোষিত কমিটিকে অগণতান্ত্রিক, বিতর্কিত দাবি করে করেছেন চলমান কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েলসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

তাদের দাবি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে পছন্দের ব্যক্তিদের পদ-পদবি দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি থাকলেও মূল্যায়ন করা হয়নি।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তারা। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল।

তিনি বলেন, গত ১৩ অক্টোবর ৬নং ওয়ার্ডে বিতর্কিত একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল গণতান্ত্রিক পন্থায় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে যেন প্রতিটি কমিটি গঠনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের নেতৃত্ব বেছে নিতে পারেন। কিন্তু কথিত অধ্যাপক জাকির হোসেন নিজের স্বার্থ হাসিল করতে তার আত্মীয়-স্বজন, পছন্দের লোকদের নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আগামীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে অংশ নিতে আগ্রহী। এজন্য চান প্রতিটি ওয়ার্ডেই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত হোক। তাই তার আশির্বাদপুষ্ট বিএনপি-জামায়াত পরিবারের লোকসহ অযোগ্যদের পদ দিচ্ছেন। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনকালে কাউন্সিলরসহ প্রার্থীগণ ক্ষোভ ও বিদ্রোহ করেছেন। কোথাও কোথাও সম্মেলনস্থলে হামলা-ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। গোটা আওয়ামী লীগ পরিবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল বলেন, কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু জাকির হোসেন পছন্দের প্রার্থীদের পদে আনতে চলচাতুরি করেছেন। চাপ প্রয়োগ করে এবং দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও প্রদান করেছেন কাউন্সিলরদের। তিনি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পছন্দের নেতৃত্ব নির্বাচনের অপচেষ্টা করেছেন। তার অগণতান্ত্রিক প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়নি কেউ। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কাউন্সিলের দাবিতেই অটল ছিলেন নেতাকর্মীরা।

৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ঘোষিত কমিটিকে নখ দন্তহীন অথর্ব কমিটি দাবি লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভাপতি পদে জাকির হোসেন যার নাম বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ করেন বটে, তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ; দলের দুর্দিনে তাকে দেখা যায়নি। সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোষিত জাহিদুল হোসেন মাসুদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তবে তিনি সম্পর্কে জাকির হোসেনের সম্পর্কে ভাগ্না। মাসুদের আপন বড় ভাই শহীদুল হোসেন আহমদ মামুন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আসন্ন কাউন্সিলে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী; তার ছোটভাই মঞ্জু জামায়াতের রাজনীতি করেন।

লিখিত বক্তব্যে আতিকুর রব চৌধুরী বলেন, ‘জাকির হোসেন সম্মেলনের দিন জোরপূর্বক কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর নিয়েছেন। স্বাক্ষর না করলে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা ভীত হয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সভাপতি পদে অন্য প্রার্থী আবুল বশর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী শেখ আব্দুর রহিম খোকন এবং নাজমুল হোসেনের স্বাক্ষর না নিয়েই তার নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করেন জাকির হোসেন। যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।’

এজন্য ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সকল নেতৃবৃন্দের কাছে জাকির হোসেনের পকেট কমিটি বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে কাউন্সিলে নির্বাচনের দাবী তাদের।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী আবুল বশর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমদ, সদস্য মখলিছুর রহমান সদস্য শায়েস্তা, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আঙ্গুর মিয়া, সদস্য নজরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা তানভির আহমদ, শ্রমিক নেতা শাহিনুর রহমান শাহীন প্রমুখ।