সিলেটে বাংলাদেশ দলের তিন পেসার অর্থাৎ হাসান, তাসকিন আর এবাদতের বোলিং তোপে মাত্র ১০১ রানে বিধ্বস্ত আয়ারল্যান্ড।
ম্যাচের শুরু থেকেই বৃষ্টি আশংকা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছিল না। এমন কন্ডিশনেও টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বার্লবির্নি। খানিকটা অবাক করা সিদ্ধান্তই বটে! কারণটা হতে পারে, প্রথম দুই ম্যাচে আগে ফিল্ডিং করে জয় বঞ্চিত থাকা। ভাগ্যের চাকা বদলের জন্যই বার্লবির্নি হয়তোবা নিজের সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন। কিন্তু সেটাই যেন কাল হয়েছে আইরিশ অধিনায়কের জন্য! এদিন সিলেটে রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছেন হাসান-তাসকিনরা।
বাংলাদেশের তিন পেসার মিলে ঝুলিতে পুরেছেন ইনিংসের ১০ উইকেটের সবকটাই। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার ঘটেছে এমন ঘটনা। বাংলাদেশি পেসারদের আগুনে পুড়ে এদিন রীতিমতো ছাড়খার আইরিশ ব্যাটাররা!
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২৮ ওভার ১ বলে ১০১ রানে অলআউট হয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড। যেখানে সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে ক্যাম্পারের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ৩২ রানে ৫ উইকেট শিকার করে দিনের সেরা বোলার হাসান। এটি তার ক্যারিয়ারেরও সেরা বোলিং ফিগার। তাছাড়া ৩টি উইকেট পেয়েছেন তাসকিন।
ইনিংস ওপেন করতে নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশি পেসারদের তোপের মুখে পড়ে দুই আইরিশ ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং। পেস বান্ধব কন্ডিশনে যেটুকু বাড়তি সুবিধা নেয়া যায়, তার সবটুকুই নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ-হাসান মাহমুদরা। শুরু থেকেই আইরিশদের রানের চাকা আটকে রাখলেও উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় পঞ্চম ওভার পর্যন্ত। এই ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে রেখে গুড লেন্থে করেছিলেন হাসান, সঙ্গে ছিল বাড়তি পেস আর তাতেই পরাস্ত ডোহেনি। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ৮ রান।
এরপর নবম ওভারে আক্রমণে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন হাসান। এই পেসারকে খেলতে এদিন চোখে রীতিমতো সরষে ফুল দেখেছেন আইরিশ ব্যাটাররা। এবার অফ স্টাম্পের বাইরে চতুর্থ স্টাম্প বরাবর রেখে গুড লেন্থে ফেলেছিলেন হাসান। ইন সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি স্টার্লিং, সরাসরি তার প্যাডে আঘাত হানে। তাতে হাসানের আবেদনে সাড়া দিতে খুব একটা সময় নেননি আম্পায়ার। সাজঘরে ফেরারা আগে ১২ বলে ৭ রান করেছেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার।
স্টার্লিং ফেরার দুই বল পর আবারও আঘাত হানেন হাসান। এবার তার শিকার হ্যারি ট্যাক্টর। ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাক অব লেন্থে রেখেছিলেন হাসান, সেখান থেকে ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট চালিয়েও পুরোপুরি পরাস্ত হন এই ব্যাটার। বল তার পায়ে আঘাত হানলে আবেদন করেন হাসান। কিন্তু আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। ফলে রিভিউ নেন তামিম ইকবাল। আর তখনই আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত বদলে আউট দিতে বাধ্য হন। সাজঘরে ফেরার আগে ৩ বল খেলেও রানের খাতাই খুলতে পারেননি ট্যাক্টর।
পরের ওভারে আক্রমণে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদও। ওভারের দ্বিতীয় বলটি খানিকটা শর্ট লেন্থে ফেলে অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের করে নিয়েছিলেন তাসকিন, সেখানে ফুটওয়ার্ক ছাড়াই জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন অ্যান্ডি বার্লবির্নি। আর তাতে কোনো ভুল করেনি দ্বিতীয় স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬ রান করে অধিনায়ক ফিরে গেলে ২৬ রানেই টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারায় আইরিশরা।
দলীয় রান ত্রিশ পেরোনোর আগেই টপ অর্ডার ব্যাটারদের হারিয়ে যখন ধুঁকছিল আয়ারল্যান্ড, তখন টাকারকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন কুর্টিস ক্যাম্পার। এই দুইজনের দৃঢ়তায় আইরিশরা আর কোনো উইকেট না হয়ারিয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করে। এরপরের গল্পটা শুধুই বাংলাদেশি পেসারদের। সিলেটে এদিন রীতিমতো রাজত্ব করেছেন তারা।
তবে টাকারকে খুব বেশি দূর এগোতে দেননি এবাদত হোসেন। ১৯তম ওভারের আক্রমণে এসে তাসকিন-হাসানদের সঙ্গে ‘উইকেট পার্টিতে’ যোগ দেন এই পেসার। ওভারের পঞ্চম বলে লাইন মিস করেন টাকার, তাতে বল আঘাত হানে তার প্যাডে। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ২৮ রান করে এই ব্যাটার ফিরলে ভাঙ্গে ৪২ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। পরের বলে স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারী করলেন এবাদত। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে হালকা ইনসুইয়ে পরাস্ত জজ ডকরেল। এঁটেই তার অফ স্টাম্প কয়েকটা ডিগবাজি খেয়ে কয়েক হাত ধূরে গিয়ে পড়লো।
এরপর ২২তম ওভারে আক্রমণে ফিরে জোড়া শিকার ধরেন তাসকিন। ওভারের প্রথম বলে নাসুমের হাতে ধরা পড়েন অ্যান্ডু ১ রান করা ম্যাকব্রাইন। এক বল পর সাজঘরে ফেরেন মার্ক অ্যাডায়ারও। এই অলরাউন্ডার অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টামে ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন। খেয়েছেন সিলভার ডাক। তাসকিনের জোড়া উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে ইনিংসে বোলিং করা বাংলাদেশের তিন পেসারই জোড়া শিকারের স্বাদ পেয়েছেন। আর তাদের তোপের মুখে ২২ ওভারে ৭৯ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়েছে আইরিশরা।
বাকি ব্যাটাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে থাকলেও এদিন ব্যাতিক্রম ছিলেন ক্যাম্পার। এই অলরাউন্ডার এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে খুব একটা পথ হাটতে পারেননি। থামতে হয়েছে ৩৬ রানে। শেষ পর্যন্ত ২৮ ওভার ১ বল খেলে ১০১ রানে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড।