সিলেটে চারদিকে থৈ থৈ পানি। শহর কিংবা গ্রাম সবদিকেই পানি। রাতভর বৃষ্টি। নেই বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সংযোগ। এই সুযোগে ডাকাতির চেষ্টা চলছে- এমন প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার মসজিদের মাইকেও ঘোষণা এসেছে। মাইকিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দ্রুত ছড়ায় এমন প্রচারণা। তাই ডাকাত আতঙ্কে সিলেটবাসী সতর্ক অবস্থানে থেকেছেন। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে এগুলো গুজব। আর এসব গুজব রটনাকারীদের তালিকা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ জানায়, ডাকাতির খবর পেয়ে একাধিক স্থান পরিদর্শন করলেও তথ্যের সত্যতা মেলেনি। যারা ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল তাদের তালিকা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, শনিবার গভীর রাতে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ও মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ডাকাতের হানার রটনা মসজিদের মাইকে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জেলা ও নগরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মসজিদে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়।
নগরের মধুশহীদ, মুন্সিপাড়া, কেওয়াপাড়া, কানিশাইল শামিমাবাদ আবাসিক এলাকা, মেডিক্যাল এলাকা, বাগবাড়ি, লামাবাজার, শেখঘাট, মদিনা মার্কেট, সাগর দিঘীর পাড়, হাউজিং এস্টেট, এয়ারপোর্ট এলাকার মংলির পাড়, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, উপশহর, টিলাগর, চণ্ডিপুল, পিরোজপুর, লাউয়াইসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়।
মাইকিং করে বলা হয়, এলাকায় ডাকাত হানা দিয়েছে। কেউ যাতে বাসার দরজা না খোলে। এরপর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পুলিশকে নগরের বিভিন্ন সড়কে টহল জোরদার করতে দেখা যায়। রাত আড়াইটার দিকে বিভিন্ন সড়কে সাইরেন বাজিয়ে টহল দিচ্ছিল পুলিশের গাড়ি।
ফেসবুকে দেওয়া একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা একটি মোটরসাইকেলকে ধাওয়া করছেন। সাইকেলে দুই আরোহী দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাচ্ছেন।
অবশ্য পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, তারা নগরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন। একাধিক স্থানে ডাকাত প্রবেশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে এর সত্যতা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা ডাকাত আতঙ্কের গুজব ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে প্রশাসন।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আলী মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমে ৯৯৯ থেকে ফোন দেওয়া হয়। বলা হয় কানিশাইলে ডাকাত, এরপর শামিমাবাদ- পরে বলা হয় সুরমা আবাসিক এলাকা। এভাবে বিভিন্ন এলাকার নাম বলা হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে ডাকাত আতঙ্কের বিষয়ে ‘গুজব’ পোস্ট দেন বিভিন্ন জন। বিভিন্ন মসজিদেও মাইকিং করা হয়।’
ওসি আলী মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমরা টহল জোরদার করি। কিন্তু এক এলাকায় গেলে আরেক এলাকায় ডাকাতের কথা শোনা যায়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারপরও এসএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় কোতোয়ালি পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।’
এ ধরনের কোনো ঘটনা দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অথবা জাতীয় জরুরি পরিষেবা হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ জানানোর জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে সিলেট সেনানিবাসে ভয়াবহ আগুন লেগেছে- এমন গুজব রটিয়েছিল একটি চক্র। পরে র্যাব ওই চক্রের কয়েকজনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। ওই চক্রের সদস্যরা প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে জেলে আছে।