দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ১১জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। আর প্রতিবছর মারা যাচ্ছেন ৪ হাজার ৯৭১জন। নারীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে জরায়ু মুখ ক্যান্সার।
বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচাতে সিলেটে সিলেটে প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে মহিলাদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন হবে।
সিলেট বিভাগে এইচপিভি ক্যাম্পেইনে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ২২১জন কিশোরীকে বিনামূল্যে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ হাজার ৭৩৮জন, সিলেট জেলায় ১৮১ হাজার ৪৯৮ জন, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৬জন, মৌলভীবাজার জেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ৪৩১ জন ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৯১ জন।
এর আগে গত বছর ঢাকা বিভাগে এই ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার অভিজ্ঞতার আলোকে সিলেটেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ক্যান্সার নামক মহামারি থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিনামূল্যে এ ক্যাম্পেইন করলেও সিলেটের কিশোরীদের মধ্যে এখনও তেমন সাঁড়া পাওয়া যায়নি। বুধবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় মাত্র ২১ শতাংশ কিশোরী রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। আর সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় রেজিস্ট্রেশন করেছেন লক্ষ্যমাত্রার ২৬ শতাংশ। এছাড়াও হবিগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ২৪ শতাংশ ও সুনামগঞ্জে ২৪ শতাংশ কিশোরী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট সিভিল সার্জন অফিস জানায়, জেলার ১৩টি উপজেলায় এইচপিভি ক্যাম্পেইনে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৬জন কিশোরীকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে নবম শ্রেণির ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৬জন ছাত্রী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহিভূর্ত ১০ থেকে ১৪ বছরের কিশোরী ১২ হাজার ৫৪৪ জন এবং প্রতিবন্ধী কিশোরী ১৬৮ জন।
কিন্তু সিলেট জেলায় বুধবার সকাল পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩৫ হাজার ৯৩৫জন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২১ শতাংশ।
অন্যদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ হাজার ৭৩৮জন কিশোরীকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৮ হাজার ৯৯ জন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২৬ শতাংশ।
তবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেজিস্ট্রেশনের আওতায় না আসলেও ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শতভাগ কিশোরীকে টিকাদানের আওতায় আনা হবে। যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না তাদেরকেও টিকা দেওয়া হবে। তবে রেজিস্ট্রেশন করলে অনলাইনে ওই কিশোরীর সকল আপডেট তথ্য পাওয়া যাবে। যা তার ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল কিশোরীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না তাদেরকেও টিকার আওতায় আনা হবে। এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দুটি তালিকা করতে বলা হয়েছে। যাদের জন্মনিবন্ধনে সমস্যা বা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না তাদেরে তালিকা দিলে টিকাদান কর্মীরা সেসব কিশোরীদেরও টিকা প্রদান করবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওটিপি সময়মতো না আসায় এখনও অনেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। তবে টিকা নেওয়ার আগ মুহুর্তেও কেউ রেজিস্ট্রেশন করলে তাকে টিকা দেওয়া হবে। আর রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলেও টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি বলেন, এই ক্যাম্পেইনে আমার রেজিস্ট্রেশনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিলে তার ফলোআপ রিপোর্ট আমরা অনলাইনে দেখতে পারবো। তাছাড়া রেজিস্ট্রেশনধারীরা টিকা সনদও পাবে।
এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনে সিলেট জেলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় সিলেট নগরের এক অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়।
এতে বলা হয়, ১৮দিন ব্যাপী এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কিশোরীদের টিকা দেওয়া হবে। পরের আটদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহিভূর্ত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে।
সিলেট জেলায় ২ হাজার ৩৭৯ টি স্কুল টিকাদান কেন্দ্রে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে। এরমধ্যে স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ১৩টি ও অস্থায়ী ২ হাজার ৪০০ টি। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬১৩ জন কর্মী ও সমসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। তাদের পাশাপাশি ১ম সারির ৩০০ জন সুপারভাইজার কাজ তদারকি করবেন। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে এই ক্যাম্পেইনকে সামনে রেখে দেশের অন্যান্য জেলার মত সিলেট জেলায়ও জেলা পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত টিকাদানের সাথে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্যবৃন্দসহ শিক্ষক ধর্মীয় প্রতিনিধি ও অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে অবহিতকরণ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে সিলেট জেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কামনা করা হয়।