সিলেটে জমে উঠেছে মসলার বাজার, খুচরা দোকানগুলোতে ভিড়

পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র ২ দিন বাকী। এরই মধ্যে সিলেটে জমে উঠেছে মসলার বাজার। ভীড় বাড়ছে খুচরা দোকানগুলোতে। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে প্রায় সকল জাতের মসলার দাম বেড়েছে। পাইকারী ও খুচরা বাজারে মসলার দামের রয়েছে বিশাল পার্থক্য। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ। সারা বছর না থাকলেও ঈদে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের পরিবারের জন্য মসলা হয়ে উঠে নিত্যপণ্যের মত অপরিহার্য। আর এই সুযোগকে কাজে লাগান কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যদিও পাইকারী বাজারে তেমন একটা বাড়েনি খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে মসলার দাম বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান বেশির ভাগ মসলাই আমদানী নির্ভর। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে মসলার দাম পাইকারী ও খুচরা বাজারে বেড়েছে। তবে এমন খোড়া যুক্তি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছেন, ডলারের দাম বেড়েছে ঠিকই কিন্তু যে টুকু বেড়েছে, বেশি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা তার কয়েক গুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মসলার বাজার মনিটরিং না থাকায় মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতি কেজি জিরা ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে লবঙ্গ ১ হাজার ৩০০ টাকা, মানভেদে এলাচ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, গোল মরিচ ৮০০ টাকা ও কিছমিছ ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ ১৫ দিন আগে একই পণ্য প্রতিকেজি জিরা ৪২০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে লবঙ্গ ১ হাজার ১০০ টাকা, এলাচ মানভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, কাজু বাদাম ৮০০ টাকা, পেস্তাবাদাম ২ হাজার টাকা, গোল মরিচ ৬০০ টাকা ও কিছমিছ ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

সিরাজ মিয়াসহ নগরীর সিটি পয়েন্টের আশেপাশের ক্ষুদ্র মসলা ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা পাইকারী বাজার থেকে বেশী দামে পণ্য কিনে নামমাত্র লাভে বিক্রি করছি। এখানে দাম বাড়ানো নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ক্রেতাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ। তারা সামান্য মসলা ক্রয় করে। সবজাত মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে আমরা দেড়শো থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি।
এদিকে নগরীর পাইকারী ব্যাবসায়ীরা জানান, গরম মসলার সকল পণ্য দেশের বাইরে থেকে আমদানী করতে হয়। রোজার ঈদের পর থেকেই এর বাজার চড়া হতে শুরু করেছে। এরপর ডলারের বিপরীতে দেশীয় টাকার মান কমে যাওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে। তাই এসব মসলার দাম কেজিতে ২০ থেকে আড়াই শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

নগরীর একজন পাইকারী বিক্রেতা জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাবে জাহাজের বুকিং কমে যাওয়ায় পণ্যের আমদানী কমে গেছে। বেশী দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। আর সিলেটের অধিকাংশ পণ্য নদীপথে চট্টগ্রাম হয়ে সিলেটে আসে। আর চট্টগ্রামের আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এ সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের নির্ধারিত দরেই আমাদের ক্রয় এবং সামান্য লাভে বিক্রি করতে হয়।

নগরীর বন্দরবাজারের খুচরা বিক্রেতা তোফায়েল মিয়া জানান, তেল, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। আর কোরবানীর ঈদ আসলেই বেড়ে যায় মসলার দাম। এবারও বেড়েছে।

বাজারে মসলা কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরীজীবি তৌহিদুর রহমান জানান, দিন দিন সব কিছুর দাম বাড়ছে। বাজারের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। ডলারের দাম বেড়েছে-এই কথা বলে ব্যবসায়ীরা সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে বেশি মুনাফা করার জন্য ব্যবসায়ীদের এটি একটি বাহানা মাত্র। তিনি সরকারের প্রতি ঈদের আগে বাজার নিয়ন্ত্রনের দাবি জানান।
অন্যদিকে, বাজারে আসা নিম্ন আয়ের ক্রেতা চেরাগ আলী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, সারা বছর না পারলেও ঈদ এলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভাল খাওয়ার চেষ্টা করি। এই ঈদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোশত সংগ্রহ করব। পাড়ার এক অবস্থাপন্ন ব্যক্তি সামান্য কিছু টাকা দিয়েছেন ঈদের জন্য। বাজারে এসে দেখছি গোশত রান্না করার সব মসলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই অল্প অল্প করে কিনছি। তিনি মনে করেন, কারণ ছাড়াই বিক্রেতারা মসলার দাম বাড়িয়েছেন।