সিলেটে এবারও জামায়াতের সমাবেশ প্রশ্নে পুলিশের ‘না’

প্রথমবার সমাবেশের অনুমতি চেয়ে না পেয়ে ২১ জুলাই (শুক্রবার) সিলেটে দ্বিতীয়বারের বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। ১০ দফা দাবিতে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে এই সমাবেশের কথা ছিল।

তবে এবারও অনুমতি পেলো না নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানো দলটি। ফলে শুক্রবারের সমাবেশ করতে পারছে না দলটি।

এর আগে ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ পুলিশের কাছ থেকে ১৫ জুলাইয়ের সমাবেশের অনুমতি পায়নি জামায়াত। একই ‘কারণে’ দলটি শুক্রবারের সমাবেশের অনুমতিও পাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) ও মিডিয়া কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ জানান, জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করেছিল কিন্তু আনুষ্ঠানিক অনুমতি চায়নি। তাই অনুমতি দেওয়াও হয়নি।

এমন বাস্তবতায় দলটি শুক্রবার (২১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশ জাতির উদ্দেশ্যে জনসভা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে প্রেস কনফারেন্সের জায়গার নাম উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী বলেন- প্রেস কনফারেন্সের স্থান পরে জানানো হবে।

১০ দফা দাবিতে গত ১৫ জুলাই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চেয়েছিলো গত এক যুগ ধরে অপ্রকাশ্যে থাকা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। সাম্প্রতিক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে পুঁজি করে গত ১০ জুন ঢাকায় বড় সমাবেশ করে হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেওয়ার পরই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা চালাচ্ছিলো জামায়াত। সিলেট রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় সমাবশের অনুমতি চেয়ে ৫ জুলাই মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন মহানগর জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। তবে ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ ওই সমাবেশের অনমুতি দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের অনুমতির আগেই সিলেটে সমাবেশ করার তোড়জোড় শুরু করেছিলো জামায়াত-শিবির। ১৫ জুলাইয়ের আগে তারা প্রস্তুতিমূলক সভা করে বিভিন্ন শাখা-সংগঠনের সঙ্গে। এমনকি সমাবেশের তারিখের আগের দিন (১৪ জুলাই) সকালে মহানগর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সিলেট রেজিস্টারি মাঠ পরিদর্শন করতে যান। এসময় পুলিশ তাদের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে। পরদিন পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

১৫ জুলাই সমাবেশ করতে না পেরে জামায়াত ওই দিন দুপুর ১২টায় মহানগরের জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে ‘পুলিশের ভয়ে’ সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। পরে মহানগরের কুদরত উল্লাহ মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ২১ জুলাই (শুক্রবার) সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করার দ্বিতীয় দফা ঘোষণা দেন মহানগর জামায়াতের নেতারা। নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, জামায়াতের ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল দলটি।

দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভুমিকার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলো জামায়াত। গত ১০ জুন এর আগে প্রকাশ্যে সভাসমাবেশ থেকে একরকম নির্বাসিতই ছিলো দলটি। ঝটিকা মিছিল আর গোপন সভার মধ্যেই রাজনীতি সীমাবদ্ধ থাকলেও তাও করা যেতোনা নির্বিঘ্নে। সেখানেও নানা সময়ে পুলিশি অভিযানে আটক, গ্রেফতারের মতো ঘটনা ঘটতো।

তবে হঠাৎ করেই প্রকাশ্য কর্মসূচি ঘোষণা আর ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করার ফলে প্রকাশ্য রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা শুরু করে একাত্তরে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা দলটি।