সিলেটে “ইন্টারন্যাশনাল ডে অব একশন ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ পালন উপলক্ষে এক প্রতিবাদ সভা আয়োজন করেছে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল জলারবন সংলগ্ন নৌকাঘাটে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য একদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানাবে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের প্রকল্প গ্রহন করবে তা হতে পারেনা। জলবায়ূ ন্যায্যতার দাবি জানাতে হলে প্রকৃতি ও পরিবেশের পক্ষে ন্যায্য কথা বলা প্রয়োজন।
এসময় তারা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বনেতাদের কাছে কেবল জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি জানালে চলবে না, দেশীয় নেতাদের প্রকৃতিবিনাশী অপকর্ম বন্ধেও পরিবেশকর্মীদের সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। এসময় মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ বন্ধেরও দাবি তোলা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম-এর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাপা সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ডাঃ মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ জহিরুল হক সমাবেশে মূল বক্তব্য রাখেন।
প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরনের ফলে পৃথিবী উষ্ণতা, বন্যা, বরফগলাসহ পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি দায়ী। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে।
তিনি লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেন, একটি প্রাকৃতিক বনকে অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যয়ের মুখে ফেলা সঠিক হচ্ছে না। বন উজাড় জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।
আব্দুল করিম কিম বলেন, পাথারিয়া হিল রিজার্ভের জুরি ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে লাঠিটিলা বিটের ৫ হাজার ৬৩১ একর ভূমিতে বঙ্গবন্ধু-৩ নামে একটি সাফারি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে বন অধিদপ্তর। আমরা শুরু থেকেই এই প্রকল্পকে বন বিধ্বংশী পরিকল্পনা বলছি। জলবায়ূ পরিবর্তনের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতাকে শুধু দায়ি করে বসে থাকলে চলবে না, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী প্রকল্প বন্ধ করতে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনে বাংলাদেশের বহু সংখ্যক জলবায়ূ ও পরিবেশকর্মী অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহনকারীরা বিশ্বনেতাদের কাছে কেবল জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি জানিয়ে থেমে থাকবেন না, সরকারের প্রকৃতিবিনাশী অপকর্ম বন্ধেও তাদের সোচ্চার ভূমিকা প্রয়োজন। বিশেষ করে লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিলে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
প্রায় ঘন্টাব্যাপী আয়োজিত এই সমাবেশে প্রতিবাদী গান পরিবেশ্ন করে বিমান তালুকদার-এর নেতৃত্বে মেঠোসুর। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আইনি পরামর্শক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি সুদীপ্ত অর্জুন, স্থপতি ইনস্টিটিউট সিলেট-এর সাধারন সম্পাদক স্থপতি রাজন দাশ, যুব ইউনিয়ন সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, লেখক-গবেষক ডাঃ এনামুল হক, প্রাণী অধিকার বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার-এর সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ (পিএসএস) বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক মো. মোতাহের হোসেন, শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ঊষা’ প্রধান পরিচালক নিগাত সাদিয়া, হাওড় সাংবাদিক সারোয়ার লিটন, রাতারগুল সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আল আমিন প্রমুখ।