সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ

সিলেট মহানগরের শিবগঞ্জে প্রবাসী পরিবারকে মামলা-হামলার মাধ্যমে হয়রানি এবং তাদের জায়গা জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন প্রবাসী পরিবারকে এমন হয়রানির করছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে নগরের একটি সংগঠনের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শিবগঞ্জ সোনারপড়ার নবারুন ২ নম্বর বাসার বাসিন্দা হিরা মিয়ার ছেলে সাজ্জাদুর রহমান মুন্না।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তারা ৬ ভাইয়ের মধ্যে ৫ জনই প্রবাসে থাকেন। সিসিকের রায়নগর মৌজার শিবগঞ্জে প্রায় ৬ শতক জায়গা তারা ক্রয় করে বাসা নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তাদের পাশের ভূমি ক্রয় করে সেখানে ‘এসপি টাওয়ার’ নামে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করেন ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। কিন্তু মুন্নার পরিবারের সদস্যরা প্রবাসে থাকার সুযোগে তাদের ০.০২৮ একর জায়গা নজরুল দখল করে নেন। এমনকি তার ‘এসপি টাওয়ার’র ২য় তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রায় ৩ ফুট মুন্নাদের জায়গার উপরে। এছাড়া ভবন নির্মাণের সময় সিসিকের বিল্ডিং কোড মানেননি এই ইউপি চেয়ারম্যান। তার বাসায় প্রবেশের কোনো রাস্তা না থাকা সত্ত্বেও মুন্নাদের জায়গার ১৫ ফুট নিজের রাস্তার জায়গা আবেদনে উল্লেখ করে সিসিকের কাছ থেকে ভবন নির্মাণের অনুমতি নেন। পরবর্তীতে বিল্ডিং কোড না মানার বিষয়টি সিসিকের কাছে ধরা পড়লে সিসিক নজরুলের ‘এসপি টাওয়ার’ ভাঙার নোটিশ দেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সিসিকের সেই আদেশ আজও কার্যকর হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাদুর রহমান মুন্না আরও বলেন, সম্প্রতি তিনি দেশে এসে নজরুলের এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ শুরু করেন এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নজরুলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে গত ১২ ডিসেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনারকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নজরুল ইসলাম সে ডাকে আসেননি। বরং অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে মুন্নার প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হন নজরুল। তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ ডিসেম্বর মুন্না সিলেট শহর থেকে তার গ্রামের বাড়ি কুলাউড়ায় যাওয়ার পথে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা ব্রিজের উপর গাড়ি আটকে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল। এসময় মুন্নাকে তারা ধরে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে মুন্নাকে সিলেটের শাহপরাণ থানায় নিয়ে এসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কারাগারে নেওয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান মুন্না। তিনদিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। পরে তিনি ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

সাজ্জাদুর রহমান মুন্না সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ তাকে সহযোগিতা করছে না উল্লেখ করে বলেন, নজরুল প্রশাসনকে প্রভাবিত করে একের পর এক মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর মুন্নার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন নজরুল। এ অবস্থায় মুন্নার বিদেশে যাওয়া হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাকে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর নিজ বাসার সামনে নজরুলের বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হন মুন্না। এ বিষয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি পুলিশ।

মুন্না জানান, নজরুলের এসব অপতৎপরতা থেকে রেহাই পেতে তিনি বার বার স্থানীয় শালিস ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হলে তারা বিষয়টির মীমাংসা করতে চাইলেও মুরুব্বিদের বারবার অমান্য করেন নজরুল। এমতাবস্থায় ‘ভূমিখেকো’ ও ‘মামলা-হামলাবাজ’ ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের হাত থেকে বাঁচতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সাজ্জাদুর রহমান মুন্না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মুন্নার বড় ভাই ইফতেখার শামীম ও বেলাল আহমদ, কুলাউড়ার হিরা-গুলজান একাডেমি অ্যান্ড জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক উত্তম দেব, রুবেল আহমদ, কাউছার আহমদ, মোবাশ্বির আলী, আফিয়া বেগম ও হিমা আচার্য।