সিলেটজুড়ে আগামীকাল বুধবার থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
বৈঠক শেষে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ এমন তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পরিবহণ মালিক, শ্রমিক নেতাদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। এখন থেকে ১৭ পরগণার দাবি বলতে কিছু নেই, আইন অনুযায়ী সবকিছু চলবে। এতে উভয়পক্ষ সম্মতি প্রদান করে।
এর আগে সিলেটের তামাবিল সড়কে একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বৃহত্তর জৈন্তাপুরের সালিশ কমিটি ও পরিবহন নেতারা। ‘পরিবহন নেতারা গাড়ি চালাবেন না আর ১৭ পরগণার নেতারা অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক অপসারণ না করলে গাড়ি চলতে দেবেন না’ এমন দাবিতে অনড় অবস্থান নেন দুই পক্ষ।
এমন অবস্থায় বুধবার (১২ জুলাই) ভোর থেকে সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। সিলেট-তামাবিল সড়কে নির্বিঘ্নে বাস চলাচল করতে দেওয়া ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা এ কর্মবিরতির ডাক দেয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বাসচাপায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি রুষ্ট হন সিলেটের প্রভাবশালী সালিশ কমিটি জৈন্তাপুর উপজেলার ১৭ পরগনা। শুক্রবার রাত থেকেই এই সড়কে কোনো বাস চলতে দেন নি তারা। তাদের দাবি অদক্ষ এবং লাইসেন্সবিহীন জনবলকে বাদ দিতে হবে এবং জৈন্তাপুরে সংগঠিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য পরিবহন নেতাদের ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় তামাবিল রোডে গাড়ি চালানো যাবে না।
সালিশ কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে জৈন্তাপুরবাসীও সড়কে কঠোর অবস্থান নেয়। আর বারবরের মতই নিজেদের দায় এড়াতে কর্মবিরতির নামে ধর্মঘট ডেকে বসেন পরিবহন নেতারা। উল্টো ১৭ পরগণা সালিশ কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেন তারা।
এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বৃহত্তর জৈন্তাপুরের বাসিন্দারা। গতকাল সোমবার আবারো বৈঠকে বসে জৈন্তাপুর ১৭ পরগনা সালিশ কমিটি। নিজেদের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম ও মালিক সমিতি প্রকাশ্যে ক্ষমা আগ পর্যন্ত উত্তর সিলেটে তামাবিল রোড, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট রোডে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। একই সময়ে ক্ষমা চাওয়ার পর পুনরায় বাস চালাতে চাইলে ১৭ পরগনার অনুমতি নিয়েই বাস চালাতে হবে বলে জানান তারা। তবে বাস ছাড়া অন্য পরিবহন চালানোতে বাধা নেই বলেও জানান।
এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবার রাতে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন। এতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরিবহণ শ্রমিকেরা তাদের ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেয়।