সিলেটের সড়ক যেন মরণফাঁদ, প্রাণহানির যত কারণ

ছবি : প্রতীকী

  • আইন মানার সংস্কৃতি নেই কোথাও
  • আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও খামখেয়ালি
  • ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা, অতিমাত্রায় যানবাহন

শুয়াইবুল ইসলাম

একাধারে ২৪ বছর প্রবাসে ছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগীবাজার খশির নামনগর গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন। সুদূর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলেও বাড়ি যাওয়া হয়নি তার। এর আগেই সড়কে ঝরেছে তার প্রাণ।

এভাবে প্রায় প্রতিদিন সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী-চালক-পথযাত্রীসহ অনেকে। যার মধ্যে যুবক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বছরে দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়ছে; যা মহামারি ভাইরাস করোনায় প্রাণহানির চেয়েও বেশি। অথচ, ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও সম্প্রতি এর সংখ্যা আরও বেড়েছে।

সিলেটের বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনার জন্য চালক যেমন দায়ী তেমনি যাত্রী-পথচারী এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষেরও দায় রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ, চালকদের প্রশিক্ষণ ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান এবং চালক-পথচারীদের মাঝে আইন মানার সংস্কৃতি চালু করা গেলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।

সিলেটে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা :

গত ২৫ মার্চ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আপন দুই ভাইয়ের প্রাণহানি ঘটে। তারা খালার জানাজার নামাজ শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন।

নিহতরা হলেন, বানিয়াচং উপজেলার ছিলাপাঞ্জা গ্রামের মৃত কালাই মিয়ার ছেলে আব্দুল মঈন (৭০) ও তাজ উদ্দিন (৫৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অটোরিকশাটি ভাটিপাড়া এলাকায় একটি দাঁড়ানো ভেকু মেশিনকে ধাক্কা দিলে একই পরিবারের পাঁচজন আহত হন। পরে, হাসপাতালে নেওয়া হলে দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সড়কের উপর গাড়ি পার্কিংয়ের নিয়ম না থাকলেও সিলেটের বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখতে দেখা যায়। এর ফলে, দ্রুতগতির গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

সিলেট নগরে সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান। এ কাজের জন্য বালু ও পাথর সড়কের উপর ফেলে রাখা হয়। সম্প্রতি নগরের নাইওরপুর এলাকায় এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। পয়েন্ট সংলগ্ন একটি ছড়া পরিচ্ছন্ন ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য পাথর রাখা হয়েছে সড়কে। দিনে এ সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। সড়কে বালু-পাথর রাখার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোটো-বড় যানবাহন।

এই এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করেন আমিন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। মসজিদ থেকে বের হয়ে সড়ক পারাপারের সময় তার চোখের সামনেই একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে এই অবস্থায় রয়েছে বালু-পাথর। এখানে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দায়ী হবেন কি না জানি না। দেশে আইনের প্রয়োগ থাকলে এমন ঝুঁকি তৈরি হতো না এবং দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেতো।’

সড়কে তিন চাকার টমটম, অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি না থাকলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট অংশে এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে নিয়মিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এ বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি যেমন রয়েছে তেমনি আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। মহাসড়কে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত টমটম, শেরপুর থেকে আউশকান্দি পর্যন্ত এবং রশিদপুর থেকে সিলেট নগর পর্যন্ত মহাসড়কে নিয়মিত সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।

২০১৯ সালে দক্ষিণ সুরমায় বাসচাপায় সিএনজি-অটোরিকশার যাত্রী দুই বোন ও নববধূর মৃত্যু হয়। ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ওই নববধূর বিয়ে হয়েছিল।

গত বছরের ২১ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোয়ালাবাজারে হাইওয়ে পুলিশের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে দ্রুত গতির ট্রাকচাপায় টমটম চালক নূর মিয়ার প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার পর স্থানীয় টমটমের চালক ও জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। এমনকি শেরপুর হাইওয়ে পুলিশের গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম জানান, লোকবল কম থাকা সত্ত্বেও তারা চালকদের পরীক্ষা গ্রহণ করে লাইসেন্স প্রদান করেন। সিলেট জেলায় যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের লাইসেন্সে লিখা রয়েছে তারা মহাসড়কে চালাতে পারবেন না। এরপরও তারা কিভাবে মহাসড়কে চালায় সেটা তাদের জানা নেই।

গত ২৬ মার্চ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় মালবাহী ট্রাক সেতুতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের মালবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে জানান এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হাসান। তবে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কীভাবে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি সেতুতে উঠেছে তার উত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।

চালকদের বেপরোয়া গতিতে ও অধিক আয়ের চিন্তায় না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোকে দায়ী করছেন অনেকে। গত ৭ জানুয়ারি প্রবাসিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হবিগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে একই পরিবারের চার জনসহ পাঁচ জনের প্রাণহানি ঘটে। মাধবপুর উপজেলার মেটাডোর কোম্পানির কারখানার সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্ঘটনায় যে গাড়ির পাঁচজন মারা গেছেন ওই মাইক্রোবাসের চালক আগের দিন সাড়ে চারটায় মৌলভীবাজার থেকে রওয়ানা হয়ে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিশ্রাম না নিয়ে তিনি রাত সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা হয়ে সোয়া ২টায় হবিগঞ্জের মাধবপুরে পৌঁছে দুর্ঘটনার শিকার হন। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে এবং নিজের লেন ছেড়ে ওভারটেক করে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় গাড়িটি।

কেবল চালকের ভুলে দুর্ঘটনা ঘটছে এমন নয়; নগর, গ্রামীণ কিংবা মহাসড়কে সড়ক পারাপারে নেই সচেতনতা। বিভিন্ন স্থানে জেব্রা ক্রসিং থাকলেও যখন তখন সড়ক পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কে অন্তত ১০টি বাজার ও ৩০টি স্কুল-কলেজ এবং একাধিক হাসপাতাল রয়েছে। এসব এলাকায় সড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিং নেই।

দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের সুপার মো. শহিদুল্যাহ বলেন, ওভারটেকিং এবং ওভারস্পিডিং এর কারণে বেশি দুর্ঘটনা হয় মহাসড়কে। আমরা সড়কে শৃংখলা আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। গত দুই বছরে ১৬ হাজারের বেশি অবৈধ ত্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। ১২ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে। এর পাশাপাশি চালক-হেলপারদের সচেতন করতে ১৮০টি সভা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কের দুই পাশে ১০ মিটার করে জায়গায় কোনো স্থাপনা না থাকার নিয়ম থাকলেও সিলেট-ঢাকা ও সিলেট তামাবিল মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনার ছড়াছড়ি। অধিকাংশ স্থানে রোড মার্কিং নেই। বিধান না থাকলেও এ মহাসড়কের স্থানে স্থানে স্পিডব্রেকার বসানো হচ্ছে। জরিমানা করেও মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর পাশাপাশি চালকরা বিশ্রাম না নিয়েই চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি স্থানে স্থানে বাঁক থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি স্কুল পর্যায় থেকে শিশুদের রাস্তাপারাপার ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপর জোর দেন।

সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান :

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মহাসড়কের সিলেট অংশে ২০২১ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৮৫টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ১১২টি। এক বছরে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৭টি। ২০২১ সালে ১০২ জনের প্রাণহানি হলেও ২০২২ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৩ জনে। আগের বছরের চেয়ে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ২১।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট)-এর এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ জানান, বিপজ্জনক বাঁকের পাশাপাশি রোড মার্কিংয়ের অভাব, ফিডার রোড (পার্শ্ব রাস্তা) এবং সড়কে অটোরিকশার দাপটের কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মূলত ওভারটেকিং, ওভার লোড, ওভার স্পিড ও ওভার কনফিডেন্স দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনারোধে সচেতনতার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও ট্রাফিক আইন মেনে চলার তাগিদ দেন তিনি। পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ ও পথচারী ও চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে সড়কে প্রাণহানি কমবে বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সারাদেশের কী পরিস্থিতি :

নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিগত ৪ বছরের তুলনায় সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১৯ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২১১ জন। ২০২০ সালে বেড়ে হয় ৫ হাজার ৪৩১, ২০২১ সালে সড়কে প্রাণ হারান ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫৪৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতিও। তাদের প্রতিবেদনেও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত বছর সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের হিসাবে, ২০২১ সালের চেয়ে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- বছর বছর মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ছোট ও ধীরগতির যানবাহনের চলাচল দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতি, বিপজ্জনক পাল্লা দেওয়া, সড়কের ত্রুটি, চলাচলের অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) যানের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।

প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে :

সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তার হিসাব তৈরি করেছে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।

পুলিশের তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু। এদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমশক্তির ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা এবং সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিলে এই সংখ্যাটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১.৫ শতাংশেরও বেশি হবে, এতে বলা হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কর্মক্ষম যাদের বলা হচ্ছে, এর একটা অংশ আবার শিক্ষার্থী। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, হতাহতের শিকার ব্যক্তিদের বড় অংশই বয়সে তরুণ এবং শিক্ষার্থী। বিষয়টি এমন যে সহপাঠী কিংবা বন্ধুরা একসঙ্গে একই মোটরসাইকেলে চলাচলের সময় দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন।

গত বছরের ৪ জুলাই সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল এলাকায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের সামনে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী তিন কিশোরের প্রাণহানি ঘটে।

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি। সড়কের শৃংখলার অভাব তো আছেই।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে হলে আগে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু কথা দিয়ে তো সড়ক নিরাপদ হবে না।’