সিলেটের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি (এমইউ) সিলেটের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) পণ্য হিসেবে বেতশিল্পের স্বীকৃতি আদায়ে ডকুমেন্টেশন বা নথিপত্র তৈরি করেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে এই নথিপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের কাছে নথিপত্র হস্তান্তর করেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও ই-বিজনেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট উম্মে সায়মা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ই-বিজনেস ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তাওসিফ আহমেদ অর্ণব, ভাইস প্রেসিডেন্ট মুস্তাফিজুর রহমান এবং অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মাহফুজুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ক্লাবের এই যুগান্তকারী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণাকর্মের উদ্যোগ নেওয়ায় মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সিলেটের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) পণ্য হিসেবে বেতশিল্পের স্বীকৃতি আদায়ে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির দলিলপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি ভবিষ্যতে ভৌগোলিক নির্দেশক জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অন্যান্য পণ্যের ডকুমেন্টেশন বা নথিপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি ই-বিজনেস ক্লাবের যাত্রা শুরু হয় এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। শুরু থেকেই এই ক্লাবের উদ্দেশ্য ছিল সিলেটের পণ্যের প্রচার এবং প্রসারে কাজ করা। তারই ধারাবাহিকতায় সিলেটের জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করার চিন্তা করে ক্লাব। শুরুতেই বেছে নেওয়া হয় বেতশিল্পকে। বেতশিল্পের ডকুমেন্টেশন তৈরি করার জন্য এই ক্লাবের সদস্যরা মাঠপর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গ্রন্থ ও দলিলপত্র থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করেন।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক তাঁর সংগ্রহে থাকা সিলেটের উপর রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ সরবরাহসহ সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, সিলেটের বেতশিল্পের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ২শ’ বছর পূর্বে বাণিজ্যিকভাবে বেতের তৈরী বিভিন্ন পণ্য তৈরির লিখিত ইতিহাস পাওয়া গেছে। সিলেটের প্রাচীন বেতশিল্প এলাকা হচ্ছে ঘাসিটুলা। লোকমুখে শোনা যায়, ঘাসিটুলার মেয়েদের অন্য এলাকায় বিয়ে দেওয়া হতো না। আবার ছেলেদেরও অন্য এলাকার মেয়ে বিয়ে করানো হতো না, কারণ ছিল ঐতিহ্যের বেতশিল্প। এখানকার বেতশিল্পীদের মনে একটা সংশয় কাজ করত। মেয়েকে বাইরের এলাকায় বিয়ে দিলে সে যদি স্বামীর বাড়ির এলাকার লোকজনকে বেতের শৈল্পিক কাজ শিখিয়ে দেয়। আবার ছেলের জন্য অন্য এলাকার মেয়ে বিয়ে করিয়ে আনা হলে যদি ওই মেয়েটি তার বাবার বাড়ির এলাকার লোকজনকে বেতের কাজ শিখিয়ে দেয়! তা হলে তো সিলেটের একমাত্র বেতশিল্পের এলাকা বৃহত্তর ঘাসিটুলার কদর আর থাকবে না! এ ছাড়া সিলেট সদরের শেখঘাটস্থ ছাপরবন্দ পাড়ার কারিগরগণের প্রস্তুতকৃত বেত নির্মিত এক ছোট গৃহ ১৮৮৩ সালে ইংল্যান্ডের প্রদর্শনীতে পাঠানো হয়েছিল। এই নির্মিত গৃহ বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল সবার কাছে।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বিশেষ উদ্যোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘বেতশিল্প ও শীতলপাটি ছাড়াও কমলা লেবু, সাতকরা, জারা লেবু, আদা লেবু, চুঙ্গা পিঠা, চা, জলঢুপের আনারস, শ্রীমঙ্গলের লেবু, খাসিয়া পান, রানী মাছ, সিলিকা বালি প্রভৃতির জন্য সিলেটের সুনাম সারা বিশ্বে। মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি এসব পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) সনদ পাওয়ার ব্যাপারে নথিপত্র তথা ডকুমেন্টেশন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা চাই সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে বিদ্যমান জ্ঞানভান্ডারে অবদান রাখতে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। শুধু শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও গ্র্যাজুয়েট তৈরি আমাদের মূল্য লক্ষ্য নয়। আমরা সিলেট তথা বাংলাদেশের সমস্যার জ্ঞানভিত্তিক সমাধান ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে চাই। একসময় সিলেট তথা বাংলাদেশের গর্বের প্রতিষ্ঠান হবে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি।’