সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। যে যার মতো করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রচার। নানা সমীকরণে হিসেব-নিকেশ করে মাঠ ধরে রাখার কৌশলেই যেন হাঁটছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা। লক্ষ্য একটাই- আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভ। কিন্তু সবকিছু এক গুঞ্জনে থমকে গেল। বাতাসে খবর এলো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনেয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলের হাইকমান্ড বেছে নিয়েছে। নৌকার মাঝি তিনিই হচ্ছেন! এ খবরে নীরব ক্ষোভের অনলে পুড়ছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ।
এ নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে কেউ কেউ বলছেন, আনোয়ারুজ্জামানই যে দলের মেয়র প্রার্থী, তা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়নি।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। এরপর ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ নেতার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর তাঁর অনুসারীদের মধ্যে উৎফুল্ল ভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে তাঁকেই দলের মেয়র প্রার্থী করা হচ্ছে এমন সুরে কথা বলছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, তাঁকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এমন গুঞ্জন আর প্রচারের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগে। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা ক্ষুব্ধ, তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
সিসিকের প্রথম দুই নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কিন্তু পরের দুই নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদে জয়ী হন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সিসিকের আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে দল থেকে অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তন্মধ্যে গতবার মেয়র পদে জোর আলোচনায় থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও এটিএম হাসান জেবুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মেয়র কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমেদ শিপলুকে ঘিরে আছে আলোচনা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাঁরা দেশে থেকে বছরের পর বছর দলের জন্য কাজ করে গেলেন, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করলেন, তাঁদেরকে বাদ দিয়ে প্রবাসে বিলাসী জীবন কাটানো কোনো নেতাকে যদি মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তবে সেটা হবে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া কি এতই সোজা? এই দলে কি সঠিক নেতার এত অভাব যে প্রবাস থেকে আসা একজনকে হুট করে মেয়র প্রার্থী করা হবে? বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীও দলের মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিশ্চিত ছিলেন না। মনোনয়ন পেতে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। সেখানে নির্বাচনের ছয় মাস আগে একজনকে প্রার্থী করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে যে প্রচারণা, এটা আসলে ভাওতাবাজি।’
এদিকে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন একেবারে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। দেশে ফেরার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মী। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই। মনোনয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা মাথা পেতে নেব।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘অফিসিয়ালি ডিক্লারেশনের আগে কে প্রার্থী হবেন, তা বলা যাবে না। রাজনীতিতে গুঞ্জন থাকবে। এটা নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।’