সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) টিলাঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে দুই একর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে চা, কফিসহ বিভিন্ন পানীয় ফসলের জার্ম প্লাজম সেন্টার। পানীয় ফসলের এই বাগানে আরও রয়েছে লেমন গ্রাস, তুলসি ও কাজু বাদাম।
এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় চায়ের ঔষধি গুণ সর্বজন সমাদৃত। গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম এই অর্থকরী ফসলের চাষ ও গবেষণা চলছে এই জার্ম প্লাজম সেন্টারে। চা-গাছের ছায়ার জন্য ব্যবহৃত ছায়াগাছের গোড়ায় গোড়ায় লাগানো হয়েছে গোলমরিচ ও খুলনা অঞ্চলের বিখ্যাত চুই ঝাল গাছ।
জার্ম প্লাজমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস খরার সময় বাংলাদেশে চা পাতা তোলা সম্ভব হয় না। তাই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চা-বাগানে ড্রট টলারেন্ট ভ্যারাইটি বা খরা সহিষ্ণু চায়ের জাত উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাগানের সেরা জাতের চায়ের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেচের পরিমাণ কমিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে চা গাছ টেকানো যায় কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইট এবং অন্যান্য পোকা চা পাতার কি কি ক্ষতি করছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং মাইট ও পোকা সহিষ্ণু চায়ের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুই ধরনের চায়ের চাষ হয়। একটি চীনের চা বা ক্যামেলিয়া সাইনেসিস, অন্যটি আসামের চা বা ক্যামেলিয়া আসামিকা। সিলেট অঞ্চলে আসামিকা চায়ের উৎপাদনই বেশি হয়। আর স্ট্রং মল্ট ফ্লেভার এবং বড় দানার জন্য এর চাহিদাও ব্যাপক। তবে মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিটি-২ চা উত্তম। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটি-২ এ চারার ঘনত্ব বাড়িয়ে দিলে মোট উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। গবেষণার কাজে চা-বাগানে ৯ প্রজাতির ভারতীয় টোকলাই প্রজাতির চা গাছ ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিটি-১ থেকে বিটি-২২ পর্যন্ত ক্লোনগুলো চাষাবাদ হচ্ছে। সাথে রয়েছে ১টি বাইক্লোনাল ভ্যারাইটি ও ৪টি বাংলাদেশি বাগানের ক্লোন।
গবেষণা মাঠের চা গাছে যেমন ঝলমল করছে কচি পাতা তেমনি কফি গাছেও ভরপুর থোকায় থোকায় ফল। কফি অ্যারাবিকা ও কফি রোভাস্টা এই দুই জাতের কফির গবেষণা চলছে এখানে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে কফির চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। চা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি কফির চাষ ব্যবস্থাপনা, জাত নির্বাচনের তারতম্যে কফি উৎপাদনে কী প্রভাব পড়ছে সেটি নিয়ে চলছে গবেষণা। এছাড়াও ফল সংগ্রহের সময় এবং বেকিং টাইম কম বেশি করে কফির উৎপাদন ও মান বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং পাহাড়ি অঞ্চলের তিন ধরনের কাজু বাদামের জাত নিয়ে চলছে গবেষণা।
ক্যাম্পাসের এই গবেষণা প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে এনএটিপির প্রজেক্ট ছিল। বর্তমানে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এখন একটি জার্ম প্লাজম সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পাট শিল্প, চিনি শিল্প ইতোমধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে, চা শিল্পের বিরুদ্ধেও যড়যন্ত্র চলছে। গ্রাম থেকে শহর আবালবৃদ্ধবনিতার প্রিয় পানীয় চা। বাংলাদেশে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েছে কিন্তু উৎপাদন সে অনুপাতে বাড়েনি। চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকারকে ২০১৫ সাল থেকে বাইরের দেশ থেকে চা আমদানী করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে ভালো মানের গ্রীন টি প্রতি কেজি ২৫০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি হলেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে এই জার্ম প্লাজম সেন্টার থেকে উৎকৃষ্ট মানের গ্রীন টি প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।