২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন ফরাসি লেখক আনি আরনো। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় সুইডেনের স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি।
আনি আরনোর জন্ম হয়েছে ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তার সাহিত্য মূলত আত্মজীবনীমূলক, সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭তম নারী হিসেবে তিনি এই পুরস্কার জিতেছেন।
সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সাহস ও ব্যবচ্ছেদীয় প্রখরতার সমন্বয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছিন্নতা ও সম্মিলিত সংযম উন্মোচন করার জন্য’ তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। তাঞ্জানিয়ার নাগরিক আবদুলরাজাক গুরনাহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি মূলত ইংরেজিতে লেখেন। তার বিখ্যাত কয়েকটি উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে প্যারাডাইস (১৯৯৪), বাই দ্য সি (২০০১) এবং ডেজারশন (২০০৫)।
২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন আমেরিকান কবি লুইস গ্লাক। সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্লাককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তার নিরাভরণ সৌন্দর্যের ভ্রান্তিহীন কাব্যকণ্ঠের কারণে, যা ব্যক্তিসত্তাকে সর্বজনীন করে তোলে।
২০১৯ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হান্দক। তার বিরুদ্ধে সার্বিয়ার নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচের বলকান যুদ্ধ সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালে নোবেল কমিটির এক সদস্যের স্বামী ও জনপ্রিয় আলোকচিত্রী জ্যঁ ক্লদ আর্নোর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই ঘটনায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত। যৌন কেলেঙ্কারির পাশাপাশি বিজয়ীর নাম ফাঁস করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিতর্কের মুখে স্থগিত করা হয় ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রদান।
কেলেঙ্কারির কারণে ২০১৯ সাল থেকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে শুরু করে রয়েল সুইডিশ একাডেমি। পাল্টে যায় নোবেল কমিটির কাঠামোও। সে বছর ২০১৯ সালের বিজয়ীর পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালের স্থগিতকৃত বিজয়ীয় নামও। ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান পোলিশ লেখক ওলগা তোকারজুক।
সরাসরি নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালেই প্রথমবারের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা বাতিল করা হয়। এর আগে দ্বিতীয় ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। তবে ওই সময় যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে দেওয়া হয়নি।
২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজু ইশিগুরো। ২০১৬ সালে অ্যাকাডেমি আমেরিকান রক সংগীতের কিংবদন্তি বব ডিলানকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়।
এর আগে ১৫ জন নারী সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন। প্রয়াত টনি মরিসন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।
সাহিত্যে নোবেল পাওয়া প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী টনি মরিসন। ছবি: টুইটার/নোবেল প্রাইজসাহিত্যে নোবেল পাওয়া প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী টনি মরিসন। ছবি: টুইটার/নোবেল প্রাইজ
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (৫ অক্টোবর) রসায়নের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্কের তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন, বিজয়ী তিন জন হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারোলিন আর. বেরতোজ্জি, ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কে. ব্যারি শার্পলেস। ক্লিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োঅর্থগোনাল কেমিস্ট্রির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় তাদের এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ফ্রান্সের অ্যালাইন অ্যাসপেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ. ক্লজার এবং অস্ট্রিয়ার অ্যান্টন জেইলিঙ্গার। বেল ইনিকোয়ালিটিস এবং পাইওনিয়ারিং কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার পেয়েছেন তারা।
সোমবার (৩ অক্টোবর) চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান রাখায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সুভান্তে পাবো। বিলুপ্ত মানবজাতির জিনোম এবং মানবজাতির বিবর্তন সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য সুডিশ বিজ্ঞানীকে ২০২২ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞান অথবা শরীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
আগামী শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে (অর্থনীতি) নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে সোমবার (১০ অক্টোবর)।
প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল নিজের মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান।
১৯৬৮ সালে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। সে বছর পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধান করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ অ্যাকাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।