দেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছরের ১৭ আগস্ট সরকারি চাকুরীজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিকদের পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্তির এই স্কিম উদ্বোধন করেন।
চালু হওয়ার আটমাস পরেও এই স্কিম নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন যেমন সুবিধা কী, কত টাকা জমা দিতে হবে, বিনিময়ে কত পাবো ইত্যাদি।
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তি অনলাইনে পেনশনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। তাছাড়া পঞ্চাশোর্ধরাও টানা দশ বছর চাঁদা প্রদান করেও পেনশন সুবিধা পেতে পারেন।
তাছাড়া প্রবাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রেরিত চাঁদার উপরে থাকছে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা। সরাসরি, অনলাইন কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চাঁদা জমা দেয়ার সুবিধা, আয়কর মুক্ত পেনশন সুবিধাসহ নানা সুবিধা যোগ করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে।
প্রাথমিক অবস্থায় মোট চারটি স্কিম চালু আছে। এগুলো হলো প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা। প্রতি স্কিম আলাদা আলাদা জনগোষ্ঠীর জন্য এবং প্রতিটি স্কিমের আলাদা উদ্দেশ্য ও অন্যান্য শর্তাবলী রয়েছে।
প্রগতি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য স্কিম প্রগতি। এ স্কিমে চাঁদার হার তিনরকম। মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার। এক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে চাঁদার অর্ধেক টাকা দিকে প্রতিষ্ঠান এবং বাকি অর্ধেক কর্মচারী বহন করবেন।
সমতা
সমতা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। এক্ষেত্রে চাঁদার হার মাসিক একহাজার টাকা যার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০০ টাকা দিবেন পেনশনার এবং বাকি অর্ধেক দেবে সরকার। এই মুহূর্তে যাদের বাৎসরিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম, তারা এই স্কিমে অন্তভুর্ক্ত হতে পারবেন।
সুরক্ষা
সুরক্ষা স্কিম স্বনির্ভর ব্যক্তি যেমন কৃষক, শ্রমিক, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। যারা চাকরি করেন না কিন্তু নিজে উপার্জন করেন, এই স্কিমের আওতায় মাসিক ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার বা ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
প্রবাস
বিদেশে কর্মরত কিংবা অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য স্কিম প্রবাস। এর মাসিক চাঁদার হার ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা যা ব্যক্তি দেশে সমপরিমাণ অর্থে দিতে পারেন অথবা বৈদেশিক মুদ্রায়ও দিতে পারেন।
যেভাবে যুক্ত হবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ওয়েবসাইটের লিঙ্ক এখানে [লিঙ্ক]। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল দিয়ে কয়েকটি ধাপে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের সময় ব্যাংক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক এবং পেনশনার এক বা একাধিক নমিনী যুক্ত করতে পারবেন।
পেনশনার তার মাসিক চাঁদা মাসে মাসে কিংবা, তিনমাস পরপর অথবা বছরে একবারে পুরো চাঁদা দিতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে জরিমানা ছাড়া ১ মাস পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে প্রতিদিনের জন্য ১% বিলম্ব ফি যুক্ত হবে। তিনমাস চাঁদা না দিলে অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়ে যাবে।
অনলাইন ও যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। তবে ব্যাংকের মধ্যে আপাতত সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে যেখানে সরাসরি যে কেউ নিবন্ধন ও চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
পেনশনের সুবিধা কী
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের গ্যারান্টি সরকার দিচ্ছে তাই নির্ধারিত সময়ের পরে পেনশন প্রাপ্তি নিয়ে কোন শঙ্কার কারণ নেই। পেনশনার তার ইউনিক নাম্বার দিয়ে তার অ্যাকাউন্টের টাকা যে কোন সময় চেক করতে পারবেন।
একজন পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি ৭৫ বছর বয়স পূরণ হবার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন।
যদি পেনশনার ১০ বছর চাঁদা দেবার আগেই মারা যান তাহলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
কারো যদি পেনশনে জমাকৃত অর্থ কোন এক পর্যায়ে উত্তোলনের দরকার হয় তাহলে সেই সুযোগও থাকছে। তাছাড়া মোট জমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অর্থ তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ হিসেবেও নিতে পারবেন।
পেনশনের জন্য প্রতিমাসে জমা দেয়া চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হবে। এই অর্থে কোন প্রকার কর আসবে না। তাছাড়া মাসিক পেনশনও আয়করমুক্ত থাকবে।