বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন যাত্রায় প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অভিবাসী কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে উল্লেখ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বর্তমান সভাপতি ড. একে আব্দুল মোমেন।
রোববার (২৮ এপ্রিল) জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সের উদ্যোগে প্যারিসের লাকর্নভে আয়োজিত সিলেট উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে ৩০ ডিসেম্বরকে প্রবাসী দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবাসী দিবসে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে যে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সাথে একযোগে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ করা হয়। প্রবাসীদের যে সকল সমস্যা তা তারা তুলে ধরবেন এবং সরকার প্রবাসীদেরকে যে সকল সুবিধা দিবে তা তুলে ধরবে। যাতে প্রবাসীদের উন্নয়নের মহাসড়কে সম্পৃক্ত করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘হুন্ডি বন্ধের পাশাপাশি দেশে দ্রুত টাকা পাঠাতে আধুনিক ফাস্টট্র্যাক এ্যাপস এবং প্রবাসীদের স্মার্ট কার্ড তৈরি নিয়ে সরকার কাজ করছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা যখনই দেশে টাকা পাঠাবে তখন তাদের স্মার্ট কার্ডে পয়েন্ট যোগ হবে। এই কার্ড দিয়ে প্রবাসী এবং তাদের পরিবার দেশের স্কুল-কলেজ, ব্যাংক কিংবা হাসপাতালে গেলে যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পান।’
ড. মোমেন আরো বলেন, ‘নদী খনন, হাসপাতাল তৈরি, সড়ক সম্প্রসারণ, পার্ক নির্মাণ সহ সিলেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রস্তাবিত বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন, টাকাও বরাদ্দ দিয়েছেন কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজের অগ্রগতি খুবই কম। এই যে কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না এ বিষয়ে প্রবাসীরা সোচ্চার আওয়াজ তুলুন। যাতে কাজগুলো যথাসময়ে শেষ হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই কাজ না হওয়ার ফলে জনগণের হয়রানি বাড়ে, সরকারের খরচ বাড়ে। আর ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন হয় না। তাছাড়া কাজ না হওয়া পেছনে বড় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে বাংলাদেশকে দুর্নীতি মুক্ত করবেন। আমিও এই মঞ্চ থেকে সকল প্রবাসীদেরকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। এটা দেশের একটি ক্যান্সার এবং এই ব্যাপারে জবাবদিহিতা বাড়াতে সবার সাহায্য সহযোগিতা আশা করি।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনন্য ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তহবিল সংগ্রহ এবং স্বাধীনতার পরবর্তী কালে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে প্রবাসীদের সহযোগিতা এবং অবদান অনস্বীকার্য।’
আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খসরুজ্জামান জালালাবাদীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকের সহ-সভাপতি মুহিব উদ্দীন চৌধুরী, জাস্ট ইন ফাউন্ডেশন ইউকের ডিরেক্টর মিজানুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কায়েস চৌধুরী, আইছা প্রেসিডেন্ট উবায়দুল্লাহ কয়েছ, বিডি ফার্নিচারের পরিচালক মিয়া মাসুদ, বাংলা অটো ইকুলের হোসেন সালাম রহমান, প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এনায়েত হোসেন সোহেল, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সের সহ-সভাপতি আলতাফুর রহমান, জাবেদ হোসেন, লুলু আহমেদ, খলিলুর রহমান, সাদ মোহাম্মদ, এইচএম মিহির, আজাদ মিয়া, কোষাধ্যক্ষ হোসেন আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম (মায়া), সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদ, নির্বাহী সদস্য মাহবুবুল হক কয়েছ, কাইয়ুম রহমান ও হাসান শাহ প্রমুখ।
ফ্রান্স-বাংলাদেশ দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. একে আব্দুল মোমেনকে উত্তরীয় পরিয়ে সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে বিভিন্নক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভা পরবর্তী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী উপমা সহ প্যারিসের শিল্পীবৃন্দ।
বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত সিলেট উৎসবকে ঘিরে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে।