মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনাধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধান চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে বিনা ধান-২৫ চাষাবাদ করা হয়।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মো. নওরুজ মিয়া, কৃষক সুলতান মিয়া ও শফিক মিয়া মোট চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর তথ্যমতে বিনা ধান-২৫ উন্নত গুণাগুণ (অতি লম্বা ও সরু) সম্পন্ন উচ্চফলনশীল, আলোক অসংবেদনশীল ও স্বল্প মেয়াদী (১৩৮-১৪৮ দিন) বোরো ধানের জাত।
এ জাতের গাছ লম্বা কিন্তু শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। প্রতি গাছে ১০-১২টি কুশি থাকে এবং প্রতি শীষে পুষ্ট দানার পরিমাণ ১৫০-১৫৫টি। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯.৭ গ্রাম।
ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৬.৬ ভাগ। ভাত সাদা, ঝরঝরে ও সুস্বাদু ফলে বাজারমূল্য বেশি এবং রপ্তানী উপযোগী।
বিনা ধান-২৫ এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। ভাত রান্না করলে চালের দ্বিগুণ আকৃতি ধারণ করে বিধায় এ চাল আমদানিকৃত বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।
এর উৎপাদন ব্যয় ব্রি-২৯ এর ধানের মতো হলেও উৎপাদন ও বাজারমূল্য বেশি থাকায় কৃষকদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধানের চাল বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, ‘এই প্রথম বিনা ধান—২৫ এর চাষাবাদ করছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগে যদি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী। ধান গাছের শিষ প্রতি ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টি ধান ধরেছে যা অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি।‘
কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।‘
তিনি জানান, কৃষিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদের উপস্থিতিতে এ জাতের ধানের মাঠদিবস আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল একটি জাত। পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি, ফলনও ভাল হয়েছে। আশাকরি আগামীতে এ জাতের চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।‘