সিলেটের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর)সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক চলতি বছর (২০২৪) একুশে পদক পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়।
লোক কবিদের এই সব লোকগান সংগ্রহ ও সুর সংযোজনের মাধ্যমে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শ্রী বিদিত লাল দাস।
বিদিত লাল ১৯৩৬ সালের ১৫ জুন সিলেটের শেখঘাটে সম্ভ্রান্ত জমিদার লাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিদিত লাল দাস বাংলাদেশি বাউল গায়ক ও সুরকার।
বিদিত লাল দাস ছিলেন ১৯৬০ এর দশকের একজন অন্যতম বেতার গায়ক। ছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী, সুরকার, লোকগবেষক এবং সঙ্গীত পরিচালক। সিলেটে জন্ম নেয়া এই লোকসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট, সিলেটের সুরমা নদীকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। সুরমার তরঙ্গের মতোই যেনো দূলায়িত তাঁর সুরের ভূবন। প্রিয় এই নদীর বুকে ভেসে ভেসে অসংখ্য গান তিনি সুর করেছেন।
বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। ‘বিদিত লাল দাস ও তার দল’ নামক সেই দলটি সত্তরের দশকের এক জনপ্রিয় দল ছিলো। সেই দলে ছিলেন আকরামুল ইসলাম, সুবীর নন্দী, রামকানাই দাশ, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক প্রমুখ অনেকেই। বিদিত লাল দাসই ছিলেন সেই দলের দলনেতা।
তিনি বাংলা লোকগানের কিংবদন্তী এই সুরকার হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, শীতালং ফকির ও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক গীতিকবিদের গানে সুর করেছেন। তার সুরকৃত উল্লেখযোগ্য গানসমূহ হল ‘মরিলে কান্দিসনে আমার দায়’, ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’, ‘প্রাণ কান্দে মন কান্দে রে’, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো’, ‘বিনোদিনী গো তর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি’ ও ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি’।
তিনি সিরাজউদ্দৌলা, দ্বীপান্তর, তপসী, প্রদীপশিখা, বিসর্জন, ও সুরমার বাঁকে বাঁকে নাটকের সংগীত পরিচালনা করেছেন। তার সফল্যের মধ্যে নজরুল একাডেমি পুরস্কার ও কলকাতায় ভারতীয় লোক সংবর্ধনা উল্লেখযোগ্য।
২০১২ সালের ৮ অক্টোবর তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
বিদিত লাল দাস ১৯৬৮ সালে কনক রানী দাসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পত্তির একমাত্র সন্তান বিশ্বদীপ লাল দাস।