সুনামগঞ্জ জেলায় এবার বোরো ধানের পর চলেছে আমন ধান চাষ। ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় ৮৩ হাজার চারশো হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে।
চলতি বছরে বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের পর এবার আমন চাষেও ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষক। তবে চলতি আমন মৌসুমে সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ার ফলে ধান ফলনে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদেরকে।
গত বছর এসময় পঞ্চাশ কেজি সারের বস্তার দাম ছিল আটশো টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বারোশো টাকা। প্রথম দফা জমিতে সার দেয়া হলেও এখন দ্বিতীয় দফা জমিতে সার দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সুনামগঞ্জের প্রান্তিক কৃষকদের।
অনেক জমিতে ধানের চারা সবুজ রং এর পরিবর্তে লালছে রং ধারণ করেছে। ওই জমিগুলোতে পটাশের অভাব রয়েছে। যে কারণে লালচে ভাব এসেছে। এ সমস্যা দূরীকরণে পটাশ সার ও জিপসাম সারা জমিতে ব্যবহার করা দরকার বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়াও কিছু জমিতে বের হতে শুরু করেছে ধানের শীষ। ওই জমিগুলোতে আক্রমণ করছে পোকা।
পোকামাকড় তাড়াতে কীটনাশক ব্যবহার করছেন কৃষক। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃকরা। ধানের চারা এবং ধান যাতে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এ জন্য কৃষকরা জমির আগাছা পরিষ্কার করে গরুর খাবার হিসেবে এগুলো নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি ও বিশ্বম্ভপুর উপজেলার সুলকাবাদ ইউনিয়ন সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এই অবস্থা। তারপরও কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন সব ধরনের সংকট কাটিয়ে সোনালী ফসল ঘরে তুলবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর সুনামগঞ্জে ৪ লাখ কৃষক রোপা আমনের আবাদ করেছেন। সে অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। যা থেকে চাল হবে ২ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য নয়শো বারো কোটি টাকা।
বিশ্বম্ভপুর উপজেলার সুলকাবাদ ইউনিয়নের কৃষক মনফর আলী বলেন, ‘বর্তমানে ধানের দাম ভালো হওয়ার কারণে আমাদের এলাকায় ধানের চাষাবাদ বাড়ছে। আর্থিক দিক দিয়ে আমরা এখন অনেক লাভবান হচ্ছি। তবে সারের দাম কিছুটা কমানো গেলে কৃষকরা আরোও বেশি লাভবান হতে পারবে। এ ছাড়াও বিএডিসি’র মাধ্যমে সেচ ভাল করা হলে কৃষকদের জন্য ধান উৎপাদন আরও সহজ হবে।’
সুনামগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘লক্ষমাত্রার চেয়ে এই বছর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহায়তা করে যাচ্ছি। নির্ধারিত মূল্য যাতে বিভিন্ন ধরণের সার কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয় সে জন্য আমরা সার ডিলার বা বিক্রেতাদের প্রতি নজরদারি রাখছি। আবহাওয়া এবং সব কিছু অনুকূলে থাকলে আগামী নভেম্বরের পহেলা থেকেই পুরোদমে জমিতে আমন ধান কাটা শুরু হবে।’
সিলেট ভয়েস/এএইচএম