সংকট কাটাতে কৌশলী সরকার

কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই শুরু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এখনও দৃশ্যমান। বাংলাদেশও প্রভাবমুক্ত নয়। নানামুখী সংকটেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তবে সংকট বড় আকার নেওয়ার আগেই কিছু কৌশল নিয়েছে সরকার। এগুলোর মাধ্যমে এ যাত্রায় সংকট কাটাতে পারলে বাংলাদেশকে আর পিছু ফিরতে হবে না, এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।

সরকারের তালিকায় এই মুহূর্তে সংকটগুলো হলো—জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি, ডলারের উচ্চমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা ইত্যাদি। এসব নিরসনে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়, আমদানি ব্যয় কমানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উচ্চমূল্যের কারণে বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করে তা ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার আয় কম হওয়ায় ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভর পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। যার ফলে চলতি জুলাইয়ের ২৭ দিনে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কম আমদানি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে আমদানি ব্যয় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।

সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অপ্রয়োজনে অফিসের এসি ও বাতি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে। এভাবে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে অফিসের কাজের সময় কমিয়ে আনার বিষয়টিও বিবেচনাধীন।

পেট্রোল পাম্পগুলোও সপ্তাহে একদিন বন্ধ এবং দিনে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের বিষয়েও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া, রাত ৮টার পর দোকান-শপিং মল বন্ধ রাখাসহ আলোকসজ্জাতেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারকে জ্বালানি সংকটের পরবর্তী ধাক্কা থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে আরও মনোযোগী ও দক্ষ হতে হবে। দূরদর্শী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গায় থেকে কৃচ্ছ্র সাধন, সঞ্চয় বাড়ানো, মিতব্যয়ী হওয়া, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার ও অপচয় কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বারবার। ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

যানজট ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বিশ্বের অনেক দেশের মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা ১০ কিলোমিটার কমানো হয়েছে। কিছু দেশ সপ্তাহে তিন দিন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোমের’ ব্যবস্থা করেছে। কিছু দেশ কার-ফ্রি সানডে প্রবর্তন করেছে। কিছু দেশ মানুষকে হাঁটা ও সাইকেল চালানোয় উদ্বুদ্ধ করছে।

বাংলাদেশ সরকারও সংকট গভীর হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সরকারি পরিপত্র জারি করেছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গাড়ি কেনা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। মিটিং ভার্চুয়ালি করার নির্দেশনা রয়েছে। আপ্যায়ন ব্যয় কমিয়ে আনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে এ, বি, সি ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হয়েছে।

একইভাবে নিয়মিত বাজার তদারকি ও টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। চলছে এ নিয়ে নজরদারিও।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানাবিধ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু নির্দেশনা প্রয়োজনে পরে দেওয়া হবে। অফিস সময় কমিয়ে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত নয়।

অপর দিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শুধু দোকান ও শপিং মল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রেখে সরকার কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে অফিসগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তরিক হতে হবে।