‘আমাদের নদীগুলো সুস্থ নেই। দিনের পর দিন নদীগুলো চরম সংকটজনক অবস্থায় পতিত হচ্ছে। খোয়াই, পুরাতন খোয়াই, সুতাং, সোনাইসহ জেলায় যে কয়টি নদী টিকে আছে সেগুলোর ওপর চলছে ক্রমাগত অত্যাচার। একদিকে নদী দখল, নদীর বুক থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালু-মাটি উত্তোলন, অন্যদিকে কলকারখানার বর্জ্য নিক্ষেপের মাধ্যমে দূষিত করা হচ্ছে নদীকে।’
২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজিত মানববন্ধন ও পথসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বেলা ১টায় হবিগঞ্জ টাউন হলের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
‘আমাদের গণমানুষের নৌপথ’ প্রতিপাদ্যে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীসহ সকল নদী রক্ষায় উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ সময় বক্তব্য দেন, বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ, সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, সাবেক জনপ্রতিনিধি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, তাসনিমুন হাসান, তৃষিতা কনা, নিসপা আক্তার, অরিত্র সাহা প্রমুখ।
সূচনা বক্তব্য দেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল।
হবিগঞ্জের নদীগুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আমাদের নদীগুলো আজ নানামুখী অত্যাচারে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। নদী নিয়ে ব্যবসা করা, নদী দখল ও ভরাট করা, নদীর উপর স্থাপনা নির্মাণ, নদীদূষণ ইত্যাদি সকল অন্যায় ও অবৈধ কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরাতন খোয়াই নদীর অধিকাংশ দখল ও ভরাটের আওতায় চলে গেছে। ২০১৯ সালে এই নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায শুরু করে প্রশাসন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা থেমে আছে। নদীর যে অংশটিকে দখলমুক্ত করা হয়েছিল, বর্তমানে সেটিও পুনরায় দখলের আওতায় চলে গেছে। খোয়াই নদী থেকে যথেচ্ছা বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে নদী স্বাভাবিক আকৃতি হারাচ্ছে। কয়েক বছর আগে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে শত বছরের পুরনো ‘গরুর বাজার নৌকা ঘাট’ হারিয়ে গেছে। এটি মোটেও স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
সুতাং নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশ আইনসহ দেশের সকল আইন অমান্য করে হবিগঞ্জে গড়ে ওঠা কল-কারখানার বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে সুতাং নদীসহ আশপাশের জলাশয় ও কৃষিজমিতে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে নদীকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থা এবং আশপাশের মানুষের জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য খোয়াই নদী। পুরাতন খোয়াই, সুতাংসহ অন্যান্য নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা দেখছি না। আমরা সচেতনতার চেষ্টা করছি। নদ-নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে হবিগঞ্জের পরিবেশ-প্রতিবেশ যে অবস্থায় রয়েছে, ভবিষ্যতে তা আরও নষ্ট হওয়া যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।