শ্রীমঙ্গলে হয়ে গেল গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব

উঁচু-নিচু টিলা আর শ্যামল চা বাগানে ঘেরা শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগানে উদযাপিত হলো গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব ওয়ানগালা। নতুন ফসল ঘরে তোলার প্রাক্কালে এ সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের শস্যদেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ১ ডিসেম্বর দিনব্যাপী এ উৎসব উদযাপন করেন। রোববার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ফুলছড়া গারো লাইনের খেলার মাঠে এ উৎসব উদযাপিত হয়। নাচ-গান ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজারের আদিবাসী গারো জনগোষ্ঠী।

গারো সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, প্রভু আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ফসল ঘরে তুললে পরের মৌসুমেও ভালো ফলন পাওয়া যায়; যার কারণে প্রতি বছর এ দিনটি বিশেষ ধর্মীয় আচার, বন্দনা ও প্রার্থনা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করেন গারো সম্প্রদায়ের লোকজন। আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সম্প্রদায়ের মানুষ এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, সাংমা, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এতে উপস্থিত ছিলেন।সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, তাদের নিজস্ব রীতি-সংস্কৃতি ধারণ করে নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব এটি। অগ্রহায়ণের শুরুতে নবান্ন উৎসবের আয়োজনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এ উৎসব উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাশ। ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল জোসেফ হাজং জানান, ওয়ান শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর গালা শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। প্রতিবছর নতুন ফসল ঘরে তোলার পর গারো সম্প্রদায়ের মানুষ এ ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন খাদ্যশস্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন। তাই অনেকেই একে নবান্ন উৎসব বলে থাকেন।