শ্রীমঙ্গলে মখন মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইউসুফ আলী।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে জেলা পরিষদ অডিটোরয়িামে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে শহরের মিশন রোড এলাকার মৃত নূর মিয়ার ছেলে মখন মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ইউসুফ আলী।
লিখিত বক্তব্যে ইউসুফ আলী বলেন, মখন মিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে নিজ এলাকা সিলেটের কুশাইন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্রীমঙ্গলে আশ্রয় নেন। এরশাদ সরকারের আমলে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ফয়েজাবাদ হিলে সরকারী খাস ভূমিতে ভূমিহীনরা দিদারাবাদ ও সুন্দরাবাদ নামে ২টি গ্রাম তৈরী করে বসবাস করে আসছিল। মখন মিয়া ও তার লাঠিয়াল বাহিনী তাদেরকে উচ্ছেদ করে সেখানে লেবুর বাগান করেন।
১৯৯২ সালে ওই এলাকার আক্রাম উল্লাহর সুন্দরী স্ত্রী মিনারা খাতুনকে মখন মিয়া জোরপূর্বক অপহরণ করেন। আজ পর্যন্ত মিনারা খাতুনের কোন খোঁজ মেলেনি। মখন মিয়া ওই এলাকায় ফিনলে টি কোম্পানির ফয়জাবাদ চা বাগানের প্রায় ২০০ একর জমি জবর দখল করে লেবু ও আনারস বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি উপজেলার উত্তরসুর মৌজাতে বিসিক শিল্প নগরীর পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ট্রাস্টের নিকট দানকৃত দেবোত্তর সম্পত্তির প্রায় ৩ একর ভূমি জবর দখল করে ফসল উৎপাদন করছেন এবং হবিবপুর মৌজার ভূমিহীনদের বরাদ্ধকৃত ৩০ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। শহরের সেন্ট্রাল রোডে এনিমি সম্পত্তি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন।
এছাড়া তিনি সরকারের ৮১ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে উপজেলার তিনটি ছড়া থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বলে জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ইউসুফ আলী আরও বলেন, মখন মিয়া ও তার সহযোগি ফুল মিয়া ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত করে বাঁধ দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন করে মানুষের ফসলি জমি, ব্রিজ, কালর্ভাট ও রাস্তা ঘাটের ক্ষতি সাধন করছেন। মখন মিয়া ও ফুল মিয়ার এ অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তিনি লিখিতভাবে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেছেন বলেও জানান।
তার এসব অভিযোগের কারনে ফুল মিয়া, মখন মিয়া ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী গত ৮ জুলাই সাইটুলা এলাকায় ইউসুফ আলীর আত্মীয় জালাল মিয়াকে হামলা করে আহত করেছেন বলে অভিযোগ ইউসুফ আলীর।
তিনি বলেন, তাদের এসব অবৈধকর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় মখন মিয়া গত ১০ জুলাই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ সম্মেলন করে।
তিনি ফিনলে টি কোম্পানি ও প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান, মখন মিয়ার কবল থেকে সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের পুনবার্সন করতে।
সংবাদ সম্মেলনে সহস্রাধিক স্থানীয় লোকজনসহ আরও উপস্থিত ছিলেন ফয়জাবাদ হিলের ভিকটিম মিনারা বেগমের স্বামী আক্রাম উল্লাহ, তার ছেলে লুঃফুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবু শহিদ আব্দুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা এম এ মতলিব, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুমুদ রঞ্জণ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর হাকিম, মুক্তিযোদ্ধা ফটিক মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী ও ব্যবসায়ী মুসাব্বির আল মাসুদ প্রমুখ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন মখন মিয়া।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে) সহকারি কমিশনার সন্দ্বীপ কুমার তালুকদার জানান, ভূমিহীনদের নামে বরাদ্ধকৃত জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না, অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।