মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রেমিকা হত্যার ঘটনায় তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মোবারক হোসেন খাঁন সাংবাদিকদেরকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া রনজিত সাঁওতাল (২১) উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা বাগানের ৮নং বস্তির শংকর সাওতালের ছেলে এবং একই চা বাগানের ইলেকট্রিশিয়ান। হত্যার শিকার বিশ্বমনি দাস (২৫) একই বস্তির মৃত লক্ষীন্দর দাসের মেয়ে। তিনি নিরালা খাশিয়া পুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১০ডিসেম্বর) ভোররাতে রনজিত সাঁওতালকে তার নিজ এলাকার একটি বিয়ে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মোবারক হোসেন খাঁন, হত্যার শিকার বিশ্বমনি দাশের সঙ্গে রনজিত সাওতালের দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। একপর্যায়ে বিশ্বমনি গর্ভবতী হয়ে পড়লে প্রেমিক রনজিতকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি।এরপর পেটের বাচ্ছার গর্ভপাত ঘটাতে বিশ্বমনিকে ওষুধ কিনে দেয় রনজিত। তাতে কাজ না হওয়ায় আবারও রনজিতকে বিয়ের প্রস্তাব এবং বিয়ে না করলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার হুমকিও দেন প্রেমিকা বিশ্বমনি।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের দিন গত ৫ ডিসেম্বর সকল সহকর্মীদের সাথে বিশ্বমনি দাস কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরালা খাশিয়া পুঞ্জিতে যান। ওই দিন বিকেলে বাড়ী ফেরার সময় উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনের ভাঙ্গা ব্রীজ এলাকায় পৌঁছলে সহকর্মীদের বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে তাদেরকে চলে যেতে বলেন তিনি। সহকর্মীরা চলে যাওয়ার পর বিশ্বমনি প্রেমিক রনজিত সাঁওতালের সঙ্গে দেখা করেন এবং পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দেন। রনজিত বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গেই সাথে থাকা বিষ পান করে বিশ্বমনি। বিষপানের পর মুখে ফেনা আসে এবং জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে। এসময় রনজিত তাকে গলায় ওড়না পেছিয়ে বাগানের ভিতরে টেনে নিয়ে যায় এবং একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে।
ঘটনার পর বিশ্বমনিকে খুঁজে না পেয়ে বাগানের বিভিন্ন সেকশনে খুঁজ করতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। একপর্যায়ে গত (৭ ডিসেম্বর) তার লাশ উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনের ভিতরে একটি গাছের নীচে ওড়না দিয়ে গলায় বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
ওসি মোবারক হোসেন খাঁন আরও জানান, রনজিত সাঁওতালকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছে। এছাড়া বিশ্বমনির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলেও থানা পুলিশকে জানিয়েছে রনজিত।