‘বিশ্বাস গঠনে মা মারিয়ার সাথে একত্রে পথচলা’- এই মূল সুরের ওপর ভিত্তি করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিণছড়া চা-বাগানের সেন্ট মেরিস চার্চে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে দুইদিনব্যাপী ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জপমালা রাণী মা মারীয়ার ৩৩তম তীর্থোৎসব।
রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় জপমালা রাণী মা মারীয়া তীর্থোৎসব। এর আগে সকাল ১১টায় তীর্থের মহা খ্রিস্টযুগ অনুষ্ঠিত হয়।
মহা খ্রিস্টযুগ উৎসর্গ করেন সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশে দ্বায়িত্বরত বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ। খ্রিস্টযোগে সহযোগিতা করেন শ্রীমঙ্গল ক্যাথলিক মিশনের প্রধান ধর্মযাজক ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ সিএসসি, সহকারী যাজক ফাদার কেবিন কুবি সিএসসি ও নটরডেম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ফাদার মৃণাল ম্রং। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মিশনের ফাদার, ব্রাদার, সিস্টারসহ প্রায় পাঁচ হাজার খ্রিস্টভক্তগণ।
এর আগের দিন শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খ্রিস্টযোগ, জপমালা প্রার্থনা ও মোমবাতির আলোর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে তীর্থোৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ তীর্থে আগত সকল খ্রিস্ট ভক্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, হরিণছড়া জপমালা রানী মা মারিয়ার তীর্থে আমাদের বিশ্বাসীগণ একত্রে মিলিত হন, মা মারিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থনা নিবেদন করে থাকেন যেন ঈশ্বরের বিশেষ অনুগ্রহ আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন। সে বিশ্বাসের গুনে অন্তরে ভালোবাসা, আনন্দ ও শান্তি অনুভব করতে পারেন। আমাদের আগামী দিনে পরস্পরের সাথে শান্তি ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে যেন আমরা সকলে বাস করতে পারি, যার গুনে প্রতিষ্ঠিত হবে ঈশ্বরের প্রেম, সত্য ও ন্যায়ের রাজ্য। বিশেষ করে আমরা প্রার্থনা করি দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনার জন্য। দেশ যেন সুখ-সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি পরিবার ও মানুষ যেন বিশ্বাস নিয়ে পথ চলতে পারে।
তীর্থোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ সিএসসি বলেন, এ বছর আমরা এই স্থানে ৩৩তম জপমালা মা মারীয়া তীর্থোৎসব পালন করছি। শ্রীমঙ্গলের এই হরিণছড়ার জপমালা রাণী মা মারীয়ার তীর্থস্থানটি সিলেট ক্যাথলিক খ্রিস্টান ডাইসিসের একমাত্র তীর্থস্থান। এখানে সিলেট বিভাগের সকল জেলা-উপজেলায় বসবাসরত ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ও দেশের বিভিন্ন বিভাগের খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা প্রতিবছর তীর্থোৎসবে অংশগ্রহণ করে প্রার্থনা করেন এবং এ বছরও তাই হয়েছে।
উৎসব উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য ডমিনিক সরকার রনি জানান, এই তীর্থোৎসবে তীর্থযাত্রী খ্রিস্টভক্তরা ব্যক্তিগত মানত করেন। উদ্দেশ্য সফলের লক্ষ্যে প্রার্থনা, অনুতাপ প্রার্থনা (পাপ স্বীকার), আরাধনা সংস্কার, জীবন্ত ক্রুশে পথ ও জপমালা রানী মা মারীয়ার কাছে বিশেষ করে ধরণীর সকল মানবকল্যাণে প্রার্থনা করা হয়।