রেলওয়ে পুলিশের নানা নাটকীয়তার পর আদালতের নির্দেশে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আলোচিত স্কুলছাত্র ফাহাদ রহমান মারজানের মৃত্যুকে হত্যা মামলা হিসেবে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম মিছবাউর রহমান।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জকে এ নির্দেশ দিয়ে আদেশে উল্লেখ করেন, বিধি মোতাবেক মামলা এফআইআর রুজু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলা নম্বর, তারিখ ও প্রতিবেদন প্রেরণ করতে হবে।
আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুরো ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপার মৌলভীবাজার ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) তদন্তভার প্রদান করা হয়।
গত বছরের ১২ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে শহরের শাহিবাগ এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রীমঙ্গল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুর রহমানের ছেলে ফাহাদকে (১৭) গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
সে শহরের শাহ মোস্তফা জামেয়া ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়, পরে রেজাল্ট বের হলে সে ওই পরীক্ষায় পাস করে। ওই সময় এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে জিআরপি পুলিশ।
কিন্তু শ্রীমঙ্গল জিআরপি পুলিশের ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামানের দায়সারা তদন্ত ও আসামিদের শনাক্ত করার পরও অদৃশ্য কারণে তাদের গ্রেপ্তার না করায় ফাহাদের পিতা তাদের তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে আদালতে মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান।
পরে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। এতে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন ফাহাদের মৃত্যু ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় পুরো ঘটনাটি দক্ষ তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তদন্তের সুপারিশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফাহাদের পিতা ফজলুর রহমান রেলওয়ে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ওসিকে অভিযুক্ত করে বলেন, শুরু থেকেই ওই দুই কর্মকর্তা তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তারা আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তদন্তের নামে মামলার আলামত নষ্ট ও সময়ক্ষেপণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, কারা ফাহাদকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে সব কিছু রেলওয়ে পুলিশ বের করার পরও তারা অদৃশ্য কারণে সব কিছু গোপন করেছেন বলে তিনি জানান।
এসব বিষয় ও তার ছেলের প্রকৃত খুনিদের বের করার জন্য নতুন তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির প্রতি অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে কথার বলার জন্য ফোন করলে শ্রীমঙ্গল জিআরপি পুলিশের ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারীর সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এসআই মীর সাব্বির আলী বলেন, ওসি ট্রেনিংয়ে আছেন।
তিনি আরও জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফাহাদের অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে এবং আদালতের সব আদেশ পালন করা হয়েছে।