পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আশানুরূপ সমাগম নেই পর্যটকদের। অনেকটা খালিই রয়েছে উপজেলার হোটেল-মোটেলগুলোও। বৃষ্টি এবং বৈরই আবহাওয়ার কারণেই পর্যটক কম হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গরমের তীব্রতার কারণে গত দুই মাস ধরে পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল না বললেই চলে। তাই, পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল কোরবানির ঈদের ছুটিতে সেই মন্দাভাব কাটিয়ে উঠবেন। কিন্তু চলমান ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকদের দেখা পায়নি চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন বলে জানান তারা।
তবে এবারের ঈদের ছুটিতে গত দুইদিনের তুলনায় শনিবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ও টিলায় স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
শনিবার (১ জুলাই) বিকেলে বৃষ্টি থামার পর শহরের ভানুগাছ রোডে অবস্থিত বধ্যভূমি ৭১, এমআর খান চা বাগানে অবস্থিত দার্জিলিং টিলা, রামনগরে অবস্থিত আদি নীল কণ্ঠ চা কেবিন, ডলুছড়াস্থ সাদ্দামের চায়ের দোকান, চাচির দোকানে বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে স্থানীয় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল।
এছাড়া পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টি মিউজিয়াম (চা জাদুঘর, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), বরুণার বাইক্কা বিল, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, ভাড়াউড়া চা বাগান লেক, লাল টিলা, হরিণ ছড়া গল্ফ মাঠ, গরম টিলা, হজম টিলাসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটে গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারে পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন ঘুরেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি কম পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, টি মিউজিয়াম এবং সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় পর্যটক সমাগম কিছুটা বাড়লেও এর মধ্যে স্থানীয়দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোয় যে পর্যটকরা আসছেন তাদের একটি বড় অংশ স্থানীয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তুলনামূলক কম পর্যটক এসেছেন। বিশেষ করে গত ঈদের তুলনায় এবারের ঈদের ছুটিতে তুলনায় তা কম। এর কারণ হিসেবে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শ্রীমঙ্গলকে নিয়ে আলাদা করে ব্র্যান্ডিং না করা, সন্ধ্যার পর কোন বিনোদন ব্যবস্থা না থাকা, হোটেল রিসোর্টের অত্যাধিক ভাড়া, পর্যটন তথ্য কেন্দ্র না থাকা এবং নতুন কোনো পর্যটন কেন্দ্র সৃৃষ্টি করতে না পারা।
হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত টি হেভেন রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মো. নূরুল আলম টিটু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ভালো নয়। ৩০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ রুম খালি পড়ে আছে। এভাবে হলে পর্যটন ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।’
চলতি মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা গত মৌসুমের চেয়ে কম জানিয়ে স্থানীয় পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে পর্যটক কম আসছেন। এর কারণ হলো আমাদের ট্যুর অপারেটররা দেশের পর্যটন স্পটগুলোকে প্রমোট করছেন না। তারা দেশের পর্যটকদের বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এই শিল্পে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এছাড়া নতুন করে কোন বিনিয়োগকারী আসবেন না।’
পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, শ্রীমঙ্গল অন্যতম একটি পর্যটন শিল্পাঞ্চল। উপজেলার সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যাতে সুন্দর এবং নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে।