‘শেখ হাসিনা ভারতের পুতুল, ভারত যেভাবে নাচায় শেখ হাসিনা সেভাবে নাচে’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছর স্বৈরাচারী আমল থাকার কারনে আমাদের কোনো সভা করা সম্ভব হয়নি। সভা করার চেষ্টা করলেই দুই তিনশ পুলিশ নিয়া আমাদের ঘেরাও করে রেখে দিতো।

সাড়ে ১৫ বছর আমরা নির্যাতিত ছিলাম। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা তার স্টিম রোলার সবচেয়ে বেশি ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে। হাজার হাজার মামলা দিয়ে নেতৃবৃন্দকে জেলে পুরিয়েছে। এটাতেও তার শান্তি হয়নি। সারাদেশের আমাদের ছয় সাতশ নেতাদের গুম করে হত্যা করেছে। বহু নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার করেছে।

ফ্যাসিষ্ট হাসিনার সবচেয়ে বড় ডর (ভয়) ছিলেন খালেদা জিয়া। আর বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পুরার পরে তাদের ভয় ছিল তারেক রহমানকে নিয়ে। মিথ্যা মামলা দিয়ে একটি টাকাও যেখানে লুটপাট হয়নি। আর ডাইনি হাসিনা বলতো এতিমের টাকা মেরে নাকি তিনি জেলে গেছেন। অথচ ওই হাসিনা ও তার দোসরা কত লক্ষ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে লুটে পুটে নিয়ে পালিয়ে গেছে। যা দেশ বাসী দেখেছেন।

শনিবার ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গনে আয়োজিত মৌলভীবাজার উপজেলা ও পৌর বিএনপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা না। শেখ হাসিনাকে ভারতে ফ্লাট করেছিল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। এবং শেখ হাসিনা ভারতের নির্দেশনায় যা যা দরকার ছিল সব দিয়েছে। দিয়ে নিজেই স্বীকার করেছে আমি যা ভারতকে দিয়েছি ভারত কখনোই ভুলতে পারবে না। এটা কোনো দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের বক্তব্য হতে পারে না কি?। আবার গর্বও করে তার পিয়নে ৪০০ কোটি টাকা বানিয়ে হেলিকপ্টার চড়ে। এতে করে হাসিনা আমাদের দেশের রাজনীতি কোথায় নিয়ে নামিয়েছে। এই শেখ হাসিনা এজেন্ডা নিয়ে আসছে এসে ভারত তাকে বলে দিয়েছে তোমার প্রথম কাজ হলো বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী থেকে বাহির করা সে এটা করেছে। এর সাথে সাথে দেশের তত্ববধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা সেটাও করেছে। কারণ ভয় ছিল তত্ববধায়ক থাকলে তো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এবং ভারতে তাকে বলে দিছে তুমি যদি ক্ষমতায় থাকতে চাও তাহলে আগে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।

এই হাসিনা তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আনার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে ৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ১৬৪ দিন হরতাল আর অবরোধ করেছে। ঐসময় এ হরতাল অবরোধ করে দেশের লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করেছে। শুধু তার ক্ষমতায় যাবার জন্য। যে মহিলা ১৬৪ দিন হরতাল অবরোধ করে এই মহিলাই আবার তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এটা কি কোন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের আচরণ হতে পারে?। এদেরকেই দেশের মানুষ কুলাঙ্গার বলে ডাকে। এরা দেশের ভালো করার জন্য রাজনীতি তে আসেনি।

শেখ হাসিনা কি দেশে ছেড়ে একবার পালিয়েছে, সে বহুবার পালিয়েছে। ১৯৮১ সালে ৩০ শে মে যেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আখাউড়া বর্ডার দিয়ে দেশে ছেড়ে বোরকা পরে ভারতে পালিয়েছিল। এর পর ওয়ান ইলেভেনেও দেশে ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছিল। সে আবার দম্ভ করে বলতো শেখ হাসিনা কখনো পালায় নাই, শেখ হাসিনা কখনো পালায় না। তাহলে ৫ আগষ্টকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল।

তিনি বলেন, ছাত্র জনতার অভ্যূত্থানে ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। সাড়ে ১৫ বছর রাম রাজত্ব করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে। এটা কোনো নেতানি। এ দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য হিটলারের প্রেতাত্বা আওয়ামী লীগারদের মাঝে জন্মাইছে। আর আওয়ামী লীগকে তার বাবাই কবর রচনা করে দিয়ে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। আর শেখ হাসিনার অধিনে আওয়ামী আসার পর গুম খুন হণহত্যা চালিয়ে তাদের রাজনীতি করার সমস্ত অধিকার হারিয়েছে।

নাসের রহমান বলেন, এই স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় বার পূণজন্ম দিয়েছিলেন। আজ তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান নয়, কে দিয়েছে তার বাবায় নাকি দিয়েছিল। কেমনে দিয়েছিল বিডিআর এর তার বার্তা দিয়ে। ওয়্যারলেস দিয়ে। তো ওয়্যার লেস টু ওয়্যার লেস। দুইটা ওয়্যার লেস দিয়ে যদি কথা হয় তাহলে সারাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষনা জানলো কিভাবে?।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোন নেতা মারা গেছে বলেন তো এরা বলতো মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের দল? এদের দলে কি একজন বীর উত্তম, বীরবিক্রম,বীর প্রতীক আছে কি ? একজনও নেই। তাহলে কিভাবে বলে আ. লীগ মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের দল। আর আমাদের দলে ৬ জন বীর প্রতীক,বীর উত্তম, বীর বিক্রম আছেন। আর আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা তিনি নিজেই বীর উত্তম ছিলেন। এই হাসিনা ভারতের পুতুল। তাকে ভারত যেভাবে নাচায় সেভাবেই নাচে। ভারতের দালালকে দেশ বাসী এখন ঠিকই বুঝে গেছে। সে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বলে ৫ আগস্ট দেশে আর যাতে হানাহানি না হয় সে জন্য নাকি দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কতবড় মিথ্যাচার। সে ক্ষমতা আকঁড়ে রাখার জন্যে শেষ সময় পর্যন্ত নির্বিচার গণহত্যার চালানোর নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু সেদিন তার নির্দেশনা দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী পালন করেনি।

আগামী ২০২৫ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায় সৃস্টি হবে। কেমনে সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বলে গণহত্যকারী কিছু থাকবে না। দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। আওয়ামী লীগ কথনো জনগনের দল ছিল না। আওয়ামী লীগ ছিল পুলিশের দল, প্রশাসনের দল আর আদালতের দল। এ তিনটা পেলে তার জনগনের দরকার নাই। এবং এ তিনটা দিয়াই সাড়ে ১৫টা বছর রাম রাজত্ব করিয়া গেছে। শুধু রাম রাজত্ব নায় দেশ লুটিয়া খেয়ে গেছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী বিএনপি নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আহমেদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন-জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, মোশাররফ হোসেন বাদশা, এম এ মুকিত,আশিক মোশাররফ, মোহাম্মদ হেলু মিয়া, ফখরুল ইসলাম, বকসী মিছবাউর রহমান, মতিন বকস, আব্দুর রহিম রিপন, মনোয়ার আহমেদ রহমান, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, আবুল কালাম বেলাল, যুক্তরাজ্যস্থ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি শাহ সাইফুল আখতার লিখন, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারফ আহমেদ, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব সরওয়ার মজুমদার ইমন প্রমূখ।

এদিকে কর্মী সমাবেশ যোগদিতে দুপুর ১২ টা থেকেই শহরে ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী জিয়া পরিবারের নামে স্লোগান, টুপি ব্যানার নিয়ে কর্মী সমাবেশে মিছিল সহকারে যোগ দেন। পরে কর্মী সমাবেশ টি জনসমাবেশ রুপান্তরিত হয়