সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এর আয়োজনে শুক্রবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী পঞ্চম সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব। স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে এ উৎসব আয়োজিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দীন ভুঞা।
এছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উৎসবের জুরি আশরাফ শিশির, চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রিতি, চলচ্চিত্র নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আতিকুজ্জামান, প্রক্টর ড. মো. মনিরুল ইসলাম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদ উদ্দীন আহমেদ, কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি সব্যসাচী নিলয় প্রমুখ।
সিলেট চলচ্চিত্র সংসদের সহ-সভাপতি নাতাশা তাসনিয়া শিপ্রার সঞ্চালনায় অতিথিরা বলেন, সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব স্বাধীনধারার তরুণ নির্মাতাদের জন্য একটা নতুন দুয়ার খুলেছে। এই উৎসব ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আগামীতে নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের স্বীকৃতি দিতে এই উৎসব ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও রাজধানীর বাইরে এমন আন্তর্জাতিক উৎসব চলচ্চিত্রের দর্শকশ্রেণী তৈরি করতে পারবে।
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনকালে সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দীন ভুঞা বলেন, “সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব স্বাধীন ধারার তরুণ নির্মাতাদের জন্য পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এই উৎসবের মাধ্যমে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছে। চলচ্চিত্র দিয়ে শুধুমাত্র আনন্দ না, সাথে দেশের ও বিশ্বের যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ ও ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে যায়। এছাড়াও এমন আন্তর্জাতিক উৎসব নতুন দিগন্তের চলচ্চিত্র নির্মানে বিপ্লব ঘটাবে।”
উৎসবের উদ্বোধনীর পর সকাল ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে ‘দ্যা মারভেলাস জার্নি- উইমেন ইন ফিল্মমেকিং’ নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রিতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ। এছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা আশরাফ শিশির।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যদানকালে প্রধান আলোচকরা বর্তমান বাংলাদেশে নারী নির্মাতাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি সকল প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে যেভাবে এদেশের নারী নির্মাতারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এদেশের চলচ্চিত্রকে সেসব বিষয়ও আলোকপাত করেন।
৩ দিন ব্যাপী এই চলচ্চিত্র উৎসবের ১ম দিন সকাল ও বিকেলে বিভিন্ন দেশি বিদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। বিকেলে প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে উৎসবে। আগত দর্শকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, সিলেটে এমন চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের ফলে আমরা ভাল চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পাচ্ছি। আগত এক দর্শক জানান, আমি তিনদিনের উৎসবে সবগুলো চলচ্চিত্র উপভোগ করবো।
আয়োজক সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ থেকে জানানো হয়, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চলবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে চলছে এ প্রদর্শনী। উৎসব চলবে পহেলা অক্টোবর পর্যন্ত। তিনদিন ব্যাপী চলবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও চলচ্চিত্র নিয়ে সেমিনার।
এছাড়া শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে উৎসব প্রাঙ্গনে রয়েছে শিশুদের জন্য আলোকচিত্র প্রদর্শনী। অভিভাবকরা সকাল থেকে আলোকচিত্র দেখাতে তাদের শিশুদের নিয়ে আসছেন।
উল্লেখ্য, এবারের আসরে বিশ্বের ১১১ টি দেশ থেকে স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ৩০৬৫ টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে । যার মধ্যে থেকে বাছাইকৃত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য মিলেয়ে মোট ১০৬ টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা আশরাফ শিশির, অভিনেতা মনোজ কুমার, নির্মাতা মুক্তাদির ইবনে সালাম, চলচ্চিত্র সমালোচক ও কিউরেটর প্রেমেন্দ্র মজুমদার ও ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক সিদ্ধার্থ মাইতি, চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রিতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ।