কোভিড ১৯ মহামারির কারণে যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা তন্মধ্যে অন্যতম। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজন। কোভিড ১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষাখাতের সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ এবং সেই লক্ষ্যে শিক্ষা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউকে বাংলাদেশ এডুকেশন ট্রাস্ট (আকবেট) ও গণসাক্ষরতা অভিযান-এর যৌথ আয়োজনে এডুকেশন লাউড – আশা-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত ‘আগামীর বাজেট : অংশীজনের প্রত্যাশা’ শীর্ষক শিক্ষা সংলাপে সুধীজন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
গণ স্বাক্ষরতা অভিযান-এর নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আকবেট-এর নির্বাহী পরিচালক মো আসাদুজ্জামান সায়েম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. রমা বিজয় সরকার, সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ, সহকারি পরিচালক-উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কবির আহমেদ মোল্যা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিল তালুকদার, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এডুকেশন কনসাল্টেন্ট অনিল কৃষ্ণ মজুমদার।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আব্দুর রউফ।
অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, শিক্ষক নুরুল আমিন, গ্রীন ডিজেবল্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির আহমদ, অভিভাবক ইমদাদুল হক, শিক্ষক রওনক আহমদ, শিক্ষক আব্দুল হান্নান, শিক্ষক নাছরিন আক্তার প্রমুখ।
চা বাগান পোষ্যদের মধ্যে শিক্ষার্থী জয়া গোয়ালা, বেদে সমপ্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার্থী লাবণী আলোচনায় অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বৃহত্তর বাজেট জনগণের অপরিহার্য দাবি। সামগ্রিক শিক্ষার মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রায়োগিক পদক্ষেপ নেওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয়। সমাজের অবহেলিত ও পশ্চাদপদ শিশুদেরকেও শিক্ষার আওতায় আনতে পারলে দেশ লাভবান হবে। আকবেট শ্রমজীবী শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করছে। যা রীতিমতো প্রশংসাজনক। শিক্ষার ক্ষেত্রে মৌলিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে পারলেই বাজেট সার্থক হবে। এ জন্য সার্বিক দিক খেয়াল রেখে বাজেট প্রণয়ন জরুরি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেছেন, বর্তমান সরকার জন ও শিক্ষাবান্ধব সরকার। অন্যান্য সময়ের তুলনায় সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বেশি বাজেট প্রণয়ন করেছে। যা আশাব্যঞ্জক। সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে সরকার শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি মিড ডে মিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহের প্রতিও আলোকপাত করেন । রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর যে কথা বলা হচ্ছে এটা মূলত কোনো ব্যয় নয় বরং এটাই হচ্ছে বড় একটি বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হলেই শিক্ষা সেক্টরে বড় একটি পরিবর্তন আসবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের বাজেটে কিংবা সরকারের ব্যয় না বাড়ানো হলেও অভিভাবক বা পরিবারের পক্ষ থেকে কিন্তু শিক্ষাখাতে ব্যয় ঠিকই বাড়ছে। অনেক পরিবার আছে যারা সন্তানের ব্যয় মেটাতে না পারার কারণেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাজেটে এক্ষত্রে অপচয় রোধ করে শিক্ষা সেক্টরকে একটি আলাদা সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করে বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটানো প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিশেষ করে চা বাগানে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্ব প্রদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।