বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এম.পি বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য, পাকিস্তানের এনএসএফ কে মনে করিয়ে দেয়। শিক্ষার সর্বত্র নৈরাজ্য চলছে। এগুলো বাদ দিয়ে আসল শিক্ষায় আসেন।
তিনি বলেন, শুধু শিক্ষার মান নয়, নৈতিকতাও কমেছে। নতুন বই এসেছে। সেই বই নিয়ে চারিদিকে ‘রা-রা’ শুরু হয়ে গেছে। কারণ সেখানে বিজ্ঞানের কথা, প্রগতি-অগ্রগতির কথা আছে। আর তারা দাঁড়িয়ে বলছে, এসব কিছু রাখা যাবে না। আর শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেছেন, ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। জনগণের উপর আস্থাহীনতা বা নির্ভর না করতে পারার কারণে সরকার পিছু হটছে।
এটিকে ‘আত্মসমর্পন’ বর্ণনা করে শিক্ষামন্ত্রীর এই ‘পিছু হটাকে’ সমর্থন করেন না জানিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে শিক্ষা নীতিকে ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন মেনন।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি-বৈষম্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সহ দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের জীবনে অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষের এখন মূল প্রশ্ন আমরা বাঁচব কীভাবে? মূল্যস্ফীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট; এমনকি আমরা যে রুটি দিয়ে নাস্তা করি, সেই গমেরও সঙ্কট। মানুষ প্রতি মুহূর্তে পথ খুঁজছে। কীভাবে বাঁচব, কীভাবে এগোব। মানুষের জীবনে এখন অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। অর্থপাচার, ব্যাংক লুটকারীদের বিচার ও শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেওয়ার দাবি।
জোটের অন্যতম শরিক আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মেনন বলেন, সামনে নির্বাচনের জন্য আপনারা ভোট চাইছেন। ভোট চান, আপত্তি নাই।
তবে ১৪ দলের জন্য ভোট চাইতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকে মিত্রদের ঐক্যের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি, সেই বাঁধন শিথিল থেকে শিথিলতর হয়। মুখে কথা থাকে এক, কাজে সেটা মিলে না। কেবলমাত্র নিজেদের জন্য নয়, সেই ভোট চাইতে হবে ১৪ দলের জন্য, সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য। এই ঐক্যের প্রশ্নটি মীমাংসা হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করছি।’ এসময় বাংলাদেশে বিদেশিদের হস্তক্ষপের সমালোচনা করেন মেনন।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও পশ্চিমারা ভয়ানক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারাই অস্ত্র সরবরাহ করছে। তাদের এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্যাট্রেজিতে বাংলাদেশকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। সে কারণেই তারা আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সংস্থাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যার বন্ধু তাদের শত্রু লাগে না। সরকারকে তাদের হস্তক্ষেপে আত্মসমর্পন না করার আহ্বান জানাই আমরা।’
তিনি বলেন, আদিবাসীদের জীবন মান উন্নয়ন, চা শ্রমিকদের ন্যায্য মঞ্জুরি, কৃষক ও মেহনতী মানুষের অধিকার ওয়ার্কার্স পার্টি কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের ‘নাক না গলানোর’ আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক জিয়া লন্ডনে বসে দিনের পর দিন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে যাচ্ছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, যিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, যে স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না। সেই তারেক জিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে বড় জুয়াড়ী হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছে, এটা কতবড় লজ্জার।’
সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড সিকান্দর আলীর সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য দীনবন্ধু পালের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হবিগঞ্জ জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মো. জালাল উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শফিকুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক তাপস ঘোষ, সুনামগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক এটিএম কয়েস, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন রুমেল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অজিত দেবনাথ, মুহিতোষ চৌধুরী প্রসাদ, কাজী আলফাজ হোসেন, আব্দুল্লাহ খোকন, রুহুল আমীন, স্বপন দাস, অপু তরফদার, ছালেহ আহমেদ, বিজয় করিম, প্রান্ত দেবনাথ, রবিউল ইসলাম, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।