শাহজালালে ‘ভুল পুশব্যাকে’ ক্ষতিগ্রস্ত বিমানের ড্রিমলাইনার

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার। বোর্ডিং ব্রিজের সংযোগ না খুলেই বিমানটি পুশব্যাক শুরু করে। এতে বিমানের ড্রিমলাইনারের দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানবন্দরের ৪ নম্বর বোর্ডিং গেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিকেলে বিমানের ড্রিমলাইনার প্লেনটি ৪ নম্বর বোর্ডিং গেটে থেমে যাত্রী নামায়। বিমানটি ফাঁকা ছিল এবং আজ সেটির কোনো ফ্লাইটও ছিল না। সাধারণত ফ্লাইট না থাকলে বিমানের দরজা বন্ধ করে বোর্ডিং ব্রিজ থেকে একে আলাদা করা হয় এবং সেটাকে পুশব্যাক (পেছনে ধাক্কা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া) করা হয়। ড্রিমলাইনারটিকে পার্কিং পজিশনে নেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বিমানের দরজা বন্ধ না করে এবং বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াই এটিকে পুশব্যাক করা শুরু করে। সে সময় প্লেনের দরজার সঙ্গে বোর্ডিং ব্রিজের একটি টান লাগে। তখন বিমানবন্দরে হইচই শুরু হয়। এতে বোর্ডিং ব্রিজ ও বিমানের দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান তিনি।

বর্তমানে ড্রিমলাইনারটিকে বিমানের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বোর্ডিং ব্রিজ থেকে বিমান পৃথক করার সময় যেসব নিয়ম-কানুন মানতে হয়, সেগুলো মানা হয়নি। তারা প্লেনের দরজা ও বোর্ডিং ব্রিজের সংযোগ না খুলেই পুশব্যাক করেছে। এই ঘটনার বিষয়টি শুনে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাই।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের চেকলিস্ট অনুযায়ী বিমানের দরজা যেভাবে বন্ধ করে ও বোর্ডিং ব্রিজ থেকে যেভাবে খুলে নেওয়া হয়, সেভাবে করা হয়নি। ঘটনাটি কীভাবে এবং কেন হয়েছে তা বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের কাছে জানতে চেয়েছি। তারা আমাকে বিস্তারিত জানাবে। তবে বোর্ডিং ব্রিজের কোনো ক্ষতি হয়নি।

বিমান পুশব্যাক ও সিগন্যাল দেওয়ার জন্য বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ বিষয়ে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেননি। একাধিকবার কল দিলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ্‌ মোস্তফা কামাল ও মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকারের বক্তব্য মেলেনি।

এর আগে গেল এপ্রিল মাসে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুটি উড়োজাহাজের ধাক্কা লেগে দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বিমান জানায়, বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। পরে আরেকটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যাঙ্গারের দিকে নেওয়া হয়। হ্যাঙ্গারের ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশের সঙ্গে ভেতরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনে অংশের ধাক্কা লাগে। এতে একটি ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশ (নোজ) এবং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনের অংশ (টেইল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ওই ঘটনায় বিমানের প্রিন্সিপাল প্রকৌশলীসহ পাঁচজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ কর্মকর্তারা হলেন বিমানের প্রিন্সিপাল প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মো. মাইনুল ইসলাম, সৈয়দ বাহাউল ইসলাম, সেলিম হোসেন খান এবং জিএসই অপারেটর মো. হাফিজুর রহমান।