দীর্ঘ ১১ বছর পর সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার প্রায় ১০ হাজার গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সৌর বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (আরএসএফ)। কারো কারো বিরুদ্ধে পাঠানো হয়েছে আইনি নোটিশ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শাল্লা উপজেলার প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষ।
তেমনি এক ভুক্তভোগী উপজেলার সুলতান গ্রামের মোহাম্মদ আলী মিয়া। রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের স্লিপ ও কাগজপত্র অনুযায়ী মোহাম্মদ আলী মিয়ার সব কিস্তি পরিশোধ করার পরেও ৭ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ আলীর নামে।
মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিদ্যুৎ এনেছিলাম সব টাকা পরিশোধও করেছি তারপরও আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এতে আমি হতাশায় ভোগছি। আমি এখন দিশেহারা, এই মামলা আমাকে অনেক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে।’
সুলতানপুর গ্রামের ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গত ২৭-০৩-২৩ তারিখে রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের ইউনিট ম্যানেজার আকবর হোসেন। মামলা নং-২৬\২৩।
মামলার দরখাস্তকারী আকবর হোসেনের মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের হেড অফিসে জাতীয় সেলসের দায়িত্বে থাকা মো. এনামুল হক বলেন, এই মূহুর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আরএসএফ’ কোম্পানির পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রাধাকান্ত সূত্রধর বলেন, যথাযথ ডকুমেন্টস নিয়ে আসামিরা সত্যমিথ্যা প্রমাণ করে আইনগতভাবে এগোতে হবে।
রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের কর্মচারী তৎকালীন টেকনিশিয়ান, আনসার সদস্য উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেনও এই মামলার ২৫নং আসামি। আনোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন আরএসএফ’ সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেমটির অবস্থা শুরু থেকেই ভাল ছিল না। অনেকে বিল/কিস্তি দেওয়ায় পরেও মাঠকর্মীরা এগুলো রেজিস্ট্রারে না উটিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে ফেলত তিনি বলেন আমি নিজেই এর প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও সময়মতো কিস্তি আদায় করতেন না তারা রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের গাফিলতির কারণেই অনেকে কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ২০১১ সালে শাল্লা উপজেলার একটি অফিস স্থাপন করে সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন। তারপর তাদের ম্যানেজম্যান্টের অবস্থা নাজুক হওয়ায় কর্মীরা সময় সময় উধাও হতে থাকে। কিছুদিন যাওয়ার পরেই তাদের অফিস সহ সবকিছু উধাও হয়ে যায়। তখন তাদের অফিস না থাকায় বিপাকে পড়ে গ্রাহকেরা, তাই ঠিকমত কিস্তিও দিতে পারেননি তারা। কিন্তু কোম্পানির গাফিলতির মাঝে প্রায় ১১ বছর পার হওয়ার পরেও মামলায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার লোককে। এতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সব কিস্তি পরিশোধ করার পরেও অনেক গ্রাহকের নামে করা হয়েছে মামলা। এতে কোন উপায়ন্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী সাধারণ গ্রাহকেরা।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড. দিপু রঞ্জন দাস বলেন, সব কিস্তি পরিশোধ করার পরেও অনেকের নামে মামলা করা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং তাদের গাফিলতির কারণে অনেকেই বিল পরিশোধ করতে পারেনি। একটা কোম্পানির অফিস সহ যদি সবকিছু উধাও হয়ে যায় তখন সব দোষ বর্তায় ওই কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের উপরই।
তিনি বলেন আমার উপজেলার এত এত লোক অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছে এতে যা যা করা দরকার সে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।