সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
চাল বিতরণে স্বজনপ্রীতি, ভূয়া নামে বরাদ্দ, পাঁচজনের টিপসই একজনের মাধ্যমে দেয়া ছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওজনেও কম দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের শাসখাই বাজারর ৬, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এ অনিয়ম দেখা যায়।
হবিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ, হাওরে আমার এক শতক জমিও নেই, কিন্তু আমি চাল পাচ্ছি না। একেকজনকে তিনটা চারটা টোকেন দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কেউ কোন প্রতিবাদ করছেন না।‘
একই এলাকার বাসিন্দা মহললাল দাস বলেন, ‘ইতা চলবোই, চলতাছেও (চলতেছে)। ওত আমি আইছি দিলে দিবো না দিলে বাদ।‘
এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদ করলে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয় বলেও জানান স্থানীয়রা।
এছাড়াও তালিকায় নাম থাকার পরও বরাদ্দের চাল পেতে তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতেও দেখা যায় অসহায় বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষদের।
ওজনে চাল কম দেওয়া বিষয়ে বিতরণকালে উপস্থিত ২নং হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সমীর চন্দ্র সরকারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি রাগান্বিত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘ওজনে কম দেওয়া, না দেওয়া, এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে এসব দেখার দায়িত্ব সাংবাদিকদের নয়।’
এই প্রতিবেদক ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনি বলেন, ‘আপনি ভিডিও করতেছেন কেন, আপনি এখান থেকে চলে যান।‘
এদিকে বরাদ্দকৃত চাল যারা পাচ্ছেন তাদেরকে এই চাল স্থানীয় দোকানদারদের কাছে বিক্রি করে দিতে দেখা গেছে।
জিজ্ঞেস করা হলে কয়েকজন জানান যে চাল ভাল না, তাছাড়া চাল তাদের দরকারও নেই, তাই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করা অনুরোধ জানিয়ে বাহাড়া ইউনিয়নের মির্জাকান্দা গ্রামের এক চাল ব্যবসায়ি বলেন, ‘জনপ্রতি ১০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ৮ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে এবং টোকেনপ্রতি ২শ টাকা দরে আমরা কিনে নিচ্ছি।‘
বরাদ্দের চাল কেন বিক্রি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা পাওয়ার কথা তারা না, যাদের চাল দরকার নেই তারাই চাল পেয়ে আবার বিক্রি করে দিচ্ছে।‘
উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন ছাড়াও বাহাড়া, শাল্লা ও আটগাঁও ইউনিয়নেও চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছ। এছাড়া কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়েছে।
এসব ভিডিওতে দেখা যায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অনেককে বস্তাভর্তি চাল দেয়া হচ্ছে এবং সেই চাল শাল্লা পার্শ্ববর্তী উপজেলা হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে কিনে নিতেও দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি বিভাগীয় কমিশনারের সাথে একটি বৈঠকে আছি। মিটিং শেষে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।‘