গতমাসে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনশেডের একটি ভবন প্রকাশ্যে নিলামে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করা হলেও বিদ্যালয়ের পুরাতন দুটি ভবন বিক্রির কোন হদিস নেই। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপনে ওই পুরাতন দুটি ভবন বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত করেছেন। এ নিয়ে সমালোচনার যেন শেষ নেই এলাকায়।
প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালের একান্ত রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. অবনী মোহন দাশ বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকায় বিস্তর প্রভাব কাটিয়ে এমনটা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে কাউকে না জানিয়েই বিশাল আকারের দুটি ভবন ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করে দেন তিনি।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছেন, প্রধান শিক্ষক কাউকে অবগত না করেই ওই দুটি ভবন গায়েব করে ফেলেন। বিধি অনুযায়ী প্রকাশ্যে নিলাম দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিকে পাত্তা দেননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. অবনী মোহন দাশের সমর্থক হওয়ায় প্রভাব কাটিয়েই মূলত এমনটা করেছেন তিনি। এনিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী সঞ্জব আলীর ছেলে মো. আব্দুল মন্নান।
আব্দুল মন্নান বলেন, ‘আমার বাবা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল আমাদেরকে কোন বিষয়ে কর্ণপাত করেন না। বরং তিনি অবনী মোহন দাশের প্ররোচনায় আমাদের দাতা সদস্যের পদটিও বিদ্যালয় থেকে কেটে দেন তিনি।’
এদিকে ‘স্কুল ভবন প্রধান শিক্ষকের বাসভবন’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর পরই ভবন থেকে সরকারি কোয়ার্টারে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যান প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে আরিফ মোহাম্মদ দুলালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে থাকেন স্থানীয়রা। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলার সহদেবপাশা গ্রামের একজন ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানান, পুরাতন একটি ভবন আমরা ২ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনতে চাচ্ছিলাম কিন্তু প্রধান শিক্ষক দুলাল স্যার নিলাম ছাড়াই ওই ভবন ভেঙ্গে বিক্রি করেদেন।
ভবনটি যাকে দিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে উপজেলার ডুমরা গ্রামের রঞ্জন সরকার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল সভাপতি সেজন্য এটা লিজ দেওয়া হয়নি। তবে ভবনটি আমরা দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভেঙ্গে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিদ্যালয়ে গেলে দূর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, নিলাম ছাড়াই আমাদেরকে কোনকিছু না জানিয়ে দুটি ভবন বিক্রি করেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিদ্যালয়ের অন্যান্য কোন বিষয়েও তিনি আমাদেরকে কখনও জানান না। তাছাড়া প্রকাশ্যে মুখ খুললে তাদের বিপদ আছে বলেও জানান তাঁরা।
ভবন বিক্রির বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিলাম ছাড়া ভবন বিক্রির কোন নিয়ম নেই। নিলাম কমিটি লাগবে। স্কুলের রেজুলেশন লাগবে। তিনি বলেন- আমাদের অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও বিদ্যালয়টির এ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘ওই ভবনগুলো বিক্রির সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এসময় তিনি বলেন- সবাই জানে শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও গোবিন্দ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি ভবন কিভাবে নিলাম দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে কেউ যদি নিলাম ছাড়াই ভবন বিক্রি করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি আইন বিরোধী কাজ করেছেন।’