সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার ১৮ দিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকেই উচ্চ পর্যায়ের সুপারিশ ও টাকার মাধ্যমে এসব প্রশ্ন পেয়েছেন বলে জানা যায়।
রবিবার (৬ আগস্ট) শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে চার পদে নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
জানা যায়, শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া চারটি পদেই মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে কমিটি। এরমধ্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধীর চন্দ্র দাসের ছেলে রাজেশ চন্দ্র দাসকে পরিছন্নতা কর্মী ও সাবেক মেম্বার রথীকান্ত দাসের ছেলেকে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি সুপারভাইজার কালীপদ দাসের আপন শ্যালক রঞ্জন চন্দ্র দাসকে অফিস সহায়ক পদে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ পরীক্ষার্থী।
আয়া পদে সরসপুর গ্রামের জয়তারা রানী দাশকেও ৪ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জয়তারা রানী দাসের স্বামী রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস পাশ্ববর্তী ফয়েজুল্লাহপুর গ্রামের নাছিমা আক্তারের কাছে জমি বিক্রি করে ৪ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিয়েছেন বলে জানান এলাকার লোকজন ।
চারটি শূণ্য পদের মধ্যে অফিস সহায়ক পদে রাসেল চন্দ্র দাস পরীক্ষার অন্তত আট দিন আগে ও আকাশ দাস নামের একজন পরিক্ষার আগের দিন প্রশ্ন পেয়েছেন। এছাড়াও একই পদে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাসের আপন শ্যালক রঞ্জন চন্দ্র দাস পরীক্ষার ১৮ দিন আগে প্রশ্ন পান।
প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি একজন অফিস সহায়ক প্রার্থীর একটি কল রেকর্ডের মাধ্যমে জানা গেছে। এছাড়া এই নিয়োগকে ঘিরে অবৈধ অর্থ লেনদেনে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী জড়িত থাকার একটি কল রেকর্ড পাওয়া গেছে।
বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকেরা ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে অনুপস্থিত পান। তবে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী ও সদস্য আছানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দুভূষণ চন্দ্র দাস মিলে চাকরি প্রার্থীদের সাথে যে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন সেসবের বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
এই নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক অধীর রঞ্জন দাস। তিনি বলেন, গত ২ আগস্ট যে নিয়োগটি দেওয়া হয়েছে এই নিয়োগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন এবং অন্য যাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়েছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিয়েছেন।
এই স্কুলের যাতে বদনাম না হয় সেজন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নিয়োগে অনিয়ম,দূর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রাণকৃষ্ণ দাস ও নীল রতন দাস।
প্রাণকৃষ্ণ দাস বলেন, প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী পরীক্ষার দিন তাদেরকে বলেছেন চাকরি বুকিং হয়ে গেছে তোমরা আমার সাথে আরো আগে যোগাযোগ করলে হয়তো একটা কিছু করতে পারতাম।
শুধু তাই নয় শাল্লা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় বিস্তর প্রভাব খাটিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাস বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তার আপন শ্যালককে ওই বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাইয়ে দেন। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধীর চন্দ্র দাসের ছেলে ও কালীপদ দাসের শ্যালকের নিয়োগ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি পলাশ রঞ্জন দাস বলেন, এই নিয়োগে কিছু অনিয়ম ও দূর্নীতির আভাস পেয়েছি। তিনি বলেন, আমরা কমিটির সবাই মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দুভূষণ দাসকে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। যিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সবধরনের আর্থিক লেনদেন করেছেন।
এটা নিয়মবহির্ভূত কাজ উল্লেখ করে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস রায় বলেন, একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অন্য কোন বিষয়ে জড়িত থাকার বিধান নেই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ডিজির প্রতিনিধি কে ছিলেন, জানতে চাইলে তাদের নাম ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি।
এব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য ইন্দুভূষণ চন্দ্র দাসের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তিনি আরো বলেন, এখন কিছু নিয়ে যান পরে আরো দেব। প্রধান শিক্ষক সব জানেন তিনি সব ম্যানেজ করবেন।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনে নিয়োগ বাতিল করা হবে।