শাল্লায় জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরায় কৃষকদের মাথায় হাত

সুনামগঞ্জের শাল্লায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি ইজারাকৃত জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের হিড়িক পড়েছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে ইজারাকৃত জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরছেন ইজারাদাররা। ফলে বর্তমানে শাল্লার সবচেয়ে বড় ছায়ার হাওরে পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

এ হাওরে এবার বোরো আবাদ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তারা অভিযোগ করেন, জলমহাল ইজারাদাররা তাদের স্বার্থে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে বিলের পানি ছেড়ে দিয়েছেন। এতে বোরো চাষের জমি পানিশূন্য হয়ে পড়েছে পৌষের শুরুতেই। শুধু ছায়ার হাওর নয়, উপজেলার ছোট-বড় সকল হাওরেই একই অবস্থা। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে হাওরের কৃষকদের মাঝে।
তাই বোরো ধানের জমি বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

শাল্লা উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছায়ার হাওরে ৪ হাজার ৬০০ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি রয়েছে। এই হাওরের জলমহালগুলো শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা ইউনিয়নের সহদেবপাশা হাওরে চিলারডুবি গাঙ্গুয়া-গাগনী গ্রুপের জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছেন ফেনখাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আহাদ নুর। এই হাওরে বোরো ধানের ফসলি জমি রয়েছে পানি সংকটে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন বিপদে।

অথচ এই জলমহালটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় ইজারা প্রদান করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ। যার নীতিমালায় রয়েছে জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করা সম্পূর্ণরূপে আইনের পরিপন্থী। কিন্তু এসব নীতিমালার কোনোরূপ তোয়াক্কা না করেই ইজারাদার স্থানীয় প্রভাবে জলমহাল শুকিয়েছেন। কৃষকরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে চিলারডুবি গাঙ্গুয়া-গাগনী গ্রুপের জলমহালের ইজারাদার সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে।

সহদেবপাশা গ্রামের কৃষক লুৎফুর রহমান বলেন, এখন পৌষ মাস। এই মাসে হাওরে চারা রোপণের কাজ ধুমধামে চলছে। আর এসব ফসলি জমিতে পানি দেয়ার একমাত্র বিল হচ্ছে এই চিলারডুবি। আর এই বিলটি অসময়ে শুকিয়ে ফেলায় আমরা কৃষকরা পানির মহাসংকটে পড়েছি। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, ছায়ার হাওরের কৃষকদের ফসলি জমি রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

একই এলাকার কৃষক হারুন অর রশীদ বলেন, গত বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় হাওরের বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। এবার বোরো ধান লাগানোর আগেই উন্নয়ন পরিকল্পনায় ইজারাকৃত জলমহালটি শুকিয়ে মাছ ধরায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বোরো আবাদী জমিতে। হাওরবাসীর কাছে এটি এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ ছায়ার হাওরের জলমহালের ইজারাদাররা বিলগুলোতে বেশি মাছ ও লাভের আশায়
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধগুলো কেটে দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর মেশিন দিয়ে পানি শুকিয়ে জলমহালের মাছ ধরে ফসলি জমি পানির সংকটে ফেলেছেন।

তিনি আরও জানান, এই হাওরে প্রায় ১০ একর জমি রয়েছে তার। ধান রোপণের পরপরই জমিগুলো পানি সংকটে রয়েছে।

তবে এই জলমহালের দায়িত্বে থাকা ফেনখাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট জলমহালের ইজারাদার আহাদ নুরের ছেলে নাসির উদ্দিন জানান, কৃষকদের সুবিধার্থেই এই জলমহাল শুকানো হয়েছে। আবার নীতিমালায় জলমহাল শুকানোর কথা উল্লেখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান বলেন, সরকারি নীতিমালায় জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ আইনের পরিপন্থী। কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে, তাহলে ব্যক্তিস্বার্থে করা হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।