- শত বছরের পুরনো পশু হাসপাতালটি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন
- বর্তমানে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে সেবা কার্যক্রম
- হাসপাতালের বাউন্ডারির পূর্বদিক এখন পৌরসভার ডাস্টবিন
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার তালুকহড়াইয়ে স্থাপিত একমাত্র পশু চিকিৎসা কেন্দ্রটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে শত বছরের পুরনো একমাত্র পশু হাসপাতালটি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ময়লার স্তূপ দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র।
এ হাসপাতালে শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাসহ প্রায় ১০টি চা বাগানের পশু চিকিৎসাসেবা চলতো একসময়। পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে কিছুদিন চালু থাকার পর বর্তমানে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে সেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির করুণ অবস্থা। চারদিকে বাউন্ডারি থাকলেও মূল ভবনের কোন চিহ্নই নেই। হাসপাতালটির বাউন্ডারির পূর্বদিক এখন পৌরসভার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। আশপাশের যত ময়লা আবর্জনা ওই বাউন্ডারির ভেতরে ফেলা হচ্ছে। এতে চতুর্দিক থেকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। যে কারণে এর পাশ দিয়ে গেলেই নাক চেপে ধরতে হয়। দেখার মত রয়েছে জরাজীর্ণ পুরাতন টিনশেডের ১টি ঘর। সেটি ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯০৩ সালে প্রায় ২৫ শতক ভূমিতে হাসপাতালটি স্থাপিত হয়েছিলো। হাসপাতালটি চলতো শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চলসহ প্রায় ১০টি চা-বাগানের পশুর চিকিৎসাসেবা। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুরত অবস্থায় এরশাদ সরকারের আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সেই স্থবিরতা কয়েকবছরেও না কাটায় বর্তমানে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। কিছু লোক ভাগাড় হিসেবে এটি ব্যবহার করছে। শত বছরের অধিক পুরনো হলেও হাসপাতালটি সংস্কারে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ।
১৯৯৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। পৌরসভার উন্নয়ন হলেও এই হাসপাতালের উন্নয়ন হচ্ছে না আজও। জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় কয়েকটি এলাকা শায়েস্তাগঞ্জ, নিজামপুর, নুরপুর লক্ষরপুর, শানখলা, উবাহাটা, ইউনিয়নে গরু-ছাগল, মহিষ বিভিন্ন ধরণের পশু রোগাক্রান্ত হলে এই হাসপাতালেই একমাত্র ভরসা। এলাকাবাসীর দাবি হাসপাতালটি সংস্কার করে পশু চিকিৎসা উপযোগী করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন এ হাসপাতালে একজন এসডিএলও, দু’জন ভেটেরিনারি চিকিৎসক একজন ভেটেরিনারি সহকারী পশুদের চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করেন। একে একে এ হাসপাতাল থেকে সবাই অন্যত্র চলে যান। এরপরও একজন ভেটেরিনারি সহকারীর মাধ্যমে শুধু কৃত্রিম প্রজনন চালু ছিল। ওই ভেটেরিনারি সহকারী চলে গেলে সেখানে পশু চিকিৎসা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এ উপজেলায় ২০২০সালের ১৭ নভেম্বর প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. রমাপদ দে। কিন্তু তার বসার স্থান না থাকায় পৌরসভার লেঞ্জাপাড়ায় একটি ভবন ভাড়া নেয়া হয়। সেখানেই তিনি হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তবে প্রায় ২ মাস পূর্বে ডা. রমাপদ দে অন্যত্র বদলী হলে সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিন ভাড়া বাসাতেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম টুটুল বলেন, হাসপাতালের পাকা ভবনটি ভেঙ্গে পড়লে বাঁশের বেড়া ও টিনের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় আরেকটি ভবন। কয়েকবছর আগে প্রবল ঝড়ে সেটিও ভেঙে পড়ে। যে কারণে পশু চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি প্রাণী সম্পদ দপ্তর, অধিদপ্তরে অবগত করেছি। নতুন করে হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন হলে পুরাতন ভবনের জায়গায় করার প্রস্তাব দেয়া হবে। প্রায় ৩ বছর ধরে ভাড়া ভবনে পশু চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রমাপদ দে বদলী হওয়ার কারণে সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।’
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ তালুকদার ইকবাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পশু হাসপাতালের কার্যক্রম স্থগিত। বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করেছি। কিন্তু কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এখানে পুনরায় দ্রুত পশু চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করতে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।