রাত পোহালেই আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ হবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের মেয়াদ। তার চলমান মেয়াদ শেষে নতুন করে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এতে নিয়োগ পেতে ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তবে এ দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষসহ দুই জৈষ্ঠ অধ্যাপক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ৪ বছরের জন্য একজন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিবেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সাধারণ তদারক ও অর্থসংক্রান্ত পরামর্শদাতা, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ পরিচালনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সকল চুক্তিতে স্বাক্ষর, সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষমতাও প্রয়োগ করিবেন। এছাড়া উপাচার্যের অনুপস্থিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কোষাধ্যক্ষ। ফলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষকরাও এই পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহী। কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির হাতে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনজনের নাম সুপারিশ করতে পারে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক জানান, শাবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষের কাজের পরিধি ও ব্যাপকতার কথা চিন্তা করলে ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থনীতি কিংবা গনিতে উচ্চতর ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতা না থাকলে এই পদে দায়িত্ব পালন প্রায় অসম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামও গনিত বিভাগের হওয়ায় কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই তিনি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন এই অধ্যাপকরা। আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বর্তমান কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হলে খুব শিগগিরই নতুন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কোষাধ্যক্ষের দৌঁড়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীন ও সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুশতাক আহমেদ।
জানা যায়, এদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। দায়িত্বপালনকালে কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও কাজের দক্ষতাই তাকে এগিয়ে রেখেছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা। কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দল-মত নির্বিশেষে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকায় দ্বিতীয় মেয়াদেও এ অধ্যাপককে কোষাধ্যক্ষ পদে দেখতে চান অধিকাংশ শিক্ষক। কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালনের পূর্বে অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, সাবেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট ও গণিত বিভাগে বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকেই বেশি নজর দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার দায়িত্ব ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র কথা বলে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। এটাই আমার সবচেয়ে বড় সফলতা।”
এরপর কোষাধ্যক্ষ পদে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমেনা পারভীন। পাশাপাশি তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে হল প্রভোস্ট, সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এরপর এগিয়ে রয়েছেন সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তিনি নিজ বিভাগের প্রধান, স্কুল অব এপ্লাইড সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন, ভর্তি কমিটির সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিশ্বিবদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার, ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির (আইআইসিটি) পরিচালক অধ্যাপক ড. এম. জহিরুল ইসলাম, রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম সাইফুল ইসলাম, সেন্টার অব এক্সিলেন্সের পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মস্তাবুর রহমান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও শাবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফারুক উদ্দিন, শাহপরান হলের প্রভোস্ট ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খানসহ অনেক জৈষ্ঠ্য অধ্যাপক কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য লিংক তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গেছে।