রেণু ও পোণা মাছ উৎপাদনে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্য প্রজনন প্রতিষ্ঠান ‘শান্তিগঞ্জ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স’।
১৯৯৬ সালে সরকার দ্বিতীয় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেণু উৎপন্ন করে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছড়িয়ে দিতে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করে। স্থাপনের শুরু থেকে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিগত বছরগুলোতে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সুনামগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় আরো দুটি কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স স্থাপন করে।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের তৎকালীন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার (বর্তমান শান্তিগঞ্জ) শান্তিগঞ্জ এলাকায় ১৯৯৬ সালে ‘কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স’ স্থাপিত হয়। এখানে রেণু ও পোনা উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা এ হ্যাচারি কমপ্লেক্সে ১৩ একর জায়গাজুড়ে ছোট-বড় ১৮টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া একটি হ্যাচারি বিল্ডিং, চারটি সার্কুলার ট্যাংক, পাঁচটি সিস্টার্ন ট্যাংক, একটি ডরমেটরি হাউস, একটি গুদাম, একটি অফিস ভবন ও একটি আবাসিক ভবনসহ মৎস্য ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে।
জানা গেছে, এখানে সব মিলিয়ে বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ আছে ১৮টি। এর বিপরীতে বর্তমানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মাত্র ৩ জন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হ্যাচারি কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী ও একজন ফিশারম্যান কাম গার্ড। বাকি ১৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে। মূল ফটকেও নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মী। মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজিকে লোকবল সংকট নিরসনের জন্য চাহিদা দেওয়া হলেও নতুন লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় সংকট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনোরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নির্মিত এই মৎস্য প্রতিষ্ঠান। এতে লক্ষ্যমাত্র অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচটি সার্কুলার ট্যাংক, চারটি সিস্টার্ন ট্যাংক অকেজো পরে আছে। লোকবল সংকটের কারণে কার্প জাতীয় মাছের পোনার মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালা বাউশ, গণিয়া, সিলবার কার্প, বিগ হেড, গ্রাস কার্প, থাই সরপুঁটি, তেলাপিয়া, গলদা চিংড়ি (জুবেনাইল) ইত্যাদি মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করার কথা থাকলেও লোকবল সংকটের ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না।
আরো জানা যায়, বর্তমানে হ্যাচারিটিতে আর্থিক সাল অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫০ কেজি রেণু এবং বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যার আর্থিক মূল্য ১৯ লাখ ২ হাজার ৭৫ টাকা। বর্তমানে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হ্যাচারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হ্যাচারিটিতে বহিরাগত জনবল দিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও হ্যাচারীর ৩টি কোয়ার্টার ভবন, একটি আবাসিক কোয়াটার্স প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হ্যাচারীটির অধিকাংশ ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা ঝরে পড়ছে, দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। এসব দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হ্যাচারী কর্মকর্তা।
হ্যাচারিতে কর্মরত অফিস সহকারী আজিম জানান, স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে হ্যাচারির কোয়ার্টারে বসবাস করি। দিনরাত নেই, লোকবল সংকট থাকলেও বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে আরো গতিশীল করা হলে এলাকাবাসী উপকৃত হতেন।
কার্প হ্যাচারি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, হাওর এলাকায় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। বর্তমানে একটি লাভজনক পেশা। মাছ উৎপাদনে হাওর এলাকায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন। সুনামগঞ্জ জেলা মাছ চাষে উর্বর ভূমি। সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর উপজেলার লোকজন এখান থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করেন। লোকবল সংকট দুর হলে উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরো বৃদ্ধি পাবে।