শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নে মসজিদে পবিত্র কোরআনকে মাথায় রেখে পরকীয়া প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে শপথ গ্রহণ করেন সিচনী গ্রামের আহমেদ জামান নামের এক ব্যক্তি। এই শপথকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মহিলাসহ অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে ইউনিয়নের সিচনী পয়েন্টে গ্রামের পঞ্চায়েত পক্ষ ও আহমেদ জামানের পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
পঞ্চায়েত পক্ষের আহতরা হলেন- জোনাব আলী ওরফে জুনাই মিয়া, তার স্ত্রী নীল তেরা, মজাই মিয়া, আবিদ মিয়া, আমীর আলী, তৈমুজ আলী। আহমেদ জামানের পক্ষের আহতরা হলেন- আমজদ হোসেন, মিলাদ হোসেন, সোহাগ আহমেদ, লাহিন আহমেদ ও রবিউল ইসলাম। তাৎক্ষণিক অন্য আহতদের নাম পাওয়া যায়নি। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় আবিদ আলী, তৈমুজ আলী, লীল তেরা ও আমজদ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাফসা (ছদ্মনাম) নামক সৌদি প্রবাসী এক মহিলার সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়ান সিচনী (শান্তিপুর) গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব আহমেদ জামান। দীর্ঘদিনের প্রেমের সুবাদে হাফসার কাছ থেকে ৮ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে এনেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। সিচনী গ্রামের একাধিক ব্যক্তির কাছে ফোন করে এ বিষয়ে বিচারপ্রার্থী হোন ওই মহিলা। এমনকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছেও বিচার দিয়েছেন তিনি। বিয়ে করতে বিভিন্ন টালবাহানা করায় প্রবাসে থেকেই মুঠোফোনে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারস্থ হন হাফসা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, প্রেমিকা হাফসাকে পুনরায় নিজের কব্জায় আনতে নতুন ফন্দি করেন আহমদ জামান। সিচনী পূর্বপাড়া জামে মসজিদে প্রবেশ করে পবিত্র কোরআন মাজিদ মাথায় নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিজে নিজে ভিডিও ধারণ করেন জামান। পরে ধারণকৃত ভিডিওটি পাঠান হাফসার কাছে। হাফসা এ ভিডিওটি সিচনী গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তির মুঠোফোনে পাঠান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে এমন কাণ্ড করায় প্রতিক্রিয়া দেখান মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও গ্রামের পঞ্চায়েত পক্ষ। গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর এ বিষয় নিয়ে বেশ উত্তেজনাকর কথাবার্তা হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। শুক্রবারে সিদ্ধান্ত হয়, মসজিদে প্রবেশ করে কোরাআন মাথায় নিয়ে শপথ ও ভিডিও ধারণ করা ধর্মীয়ভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য এ বিষয়ে মাসআ’লা বা ধর্মীয় বিধিবিধান জানা হবে। এ বিষয়ে জানতে পরদিন শনিবার সকালে আক্তাপাড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সুপার মাও. মইনুল হকের কাছে যাবেন পঞ্চায়েন পক্ষ। শনিবার সকালে সবাই একসাথে হয়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় আহমেদ জামান পক্ষের লোকজন এসে তর্কে জড়ান। এরপরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এ বিষয়ে সিচনী গ্রামের বাসিন্দা সেলিম রেজা বলেন, ওই মহিলা আমাকেও কল করেছিলো। আহমেদ জামানকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা দিয়েছে বলে মহিলা দাবি করেছে। আমি বলেছি, আপনার কিছু বলার থাকলে প্রমাণাদি নিয়ে দেশে এসে বলুন। এর মধ্যেই আহমেদ জামান মসজিদে ঢুকে কুরআন মাথায় নিয়ে ভিডিও ধারণ করেছে।
দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছুফি মিয়া বলেন, সৌদি প্রবাসী ওই মহিলা আমাকে দুই দিন ফোন করে বিচার দিয়েছেন। মহিলা দাবি করেছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা আহমেদ জামানকে দিয়েছে। পরকীয়া প্রেম করে জামান মহিলাটির সাথে প্রতারণা করছে। মসজিদে প্রবেশ করে কুরআন মাথায় নিয়ে ভিডিও ধারণ করে মহিলার কাছে পাঠিয়েছে। এটা ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনে আঘাত লেগেছে। তারা জিজ্ঞেস করেছে। মাসআ’লা এনে বিষয়টি সুরাহা দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু সকালেই সে পঞ্চায়েত পক্ষের উপর অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা করে। বিষয়টি দুঃখজনক।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন জানিয়ে আহমেদ জামান বলেন, ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে তারা যে মাসআ’লা জানার কথা ছিলো তাতে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না। মাসআ’লা মোতাবেক যে শাস্তি তারা দেবেন আমি তা মাথা পেতে নিবো। তবে আমার লোকজন তাদের উপর হামলা করেছে বলে তারা যে দাবি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো মহিলার কাছ থেকে কোনো টাকা আনিনি। শুক্রবারের বিষয় শুক্রবারেই শেষ হয়েছে। শনিবারে সকলে একসাথে হয়ে আমার দোকানের লোকদের মারধর করে ক্যাশবাক্স ছিনতাই করে নিয়ে গেচে। এসব শোনে আমি গেলে আমাকেও মারধর করেছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরিস্থিতি এই মুহুর্তে শান্ত আছে। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।