সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে চোরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর। প্রায় রাতেই ঘটছে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা।
অতিষ্ঠ এলাকাবাসী চোরের উৎপাত প্রতিকারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যদিও চোর চক্রকে খুঁজে বের করতে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন।
গত দুই সপ্তাহে ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে বাড়ির সিঁদ কেটে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে ইউনিয়নের শত্রুমর্দন গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় অন্তত দশটি ঘরে এবং সবশেষ একই রাতে ইউনিয়নের চন্দ্রপুর (কোনারবাড়ি) গ্রামে দুটি চুরির ঘটনা ঘটে।
সংঘটিত এসব চুরির ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশির ভাগ বসতবাড়ির সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ করে চোর চক্র। এরপর ঘর থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ গরু এমনকি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুরি করে নিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, মধ্যরাত থেকে শেষরাতের সময়টাতে চোরেরা কোনো ঘরের টিন কেটে, কোনো ঘরে সিঁদ কেটে আবার কোনো ঘরের তালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে নানা কৌশলে মূল্যবান মালামাল নিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে শত্রুমর্দন গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ার মৃত অর্জুন চন্দের ছেলে অবিনাশ চন্দ, তার ভাই অলক চন্দ, বারিন্দ্র চন্দের ছেলে বাপ্টু চন্দ, একই গ্রামের মুসলিম পাড়ার আউয়াল উদ্দিন, সূত্রধরপাড়ার অর্জুন সূত্রধর ও সম্ভু সূত্রধরের ছেলে ভূষণ সূত্রধর, একই পাড়ার অভি সূত্রধরের বসতঘরে চুরি হয়েছে। প্রত্যেকের ঘর থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে চোরেরা। এছাড়াও নিদনপুর গ্রামের সাগর বিশ্বাস নামের এক কৃষকের একটি গরু চুরি হয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে গত রোজায় শত্রুমর্দন বন্দেরবাড়ি এলাকা থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফিরোজ আলীর ঘর থেকে পাঁচটি গরু চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরেরা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গেল রমজান মাসে রাতের আঁধারে ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের সামন থেকে তৈয়ব আলীর ছেলে সাগর মিয়ার কন্ট্রাকে আনা সিএনজি অটোরিকশা ও হাজিবাড়ির রাস্তা থেকে সূর্জা মিয়ার ছেলে নিজাম মিয়ার সিএনজি অটোরিকশা (সুনামগঞ্জ-থ ১১-৩০৩২) চুরি হয়।
গত সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাগলা বড় জামে মসজিদের রাস্তার মুখ থেকে মৃত মন্নার মিয়ার ছেলে রহিম আলীর নতুন ক্রয় করা সিএনজি অটোরিকশাটি নিয়ে যায় চোরেরা, যার নাম্বার সুনামগঞ্জ-ত ১১-০৫৪৮। চন্দ্রপুর কোনারবাড়ির তফজ্জুল মিয়ার বাড়ি থেকে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে তিনটি মোবাইল ফোন ও নগদ একান্ন হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরচক্র।
তফজ্জুল মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার ঘরের সিঁদ কেটে চোর ঢুকে একটি আইফোন, দুটি স্মার্টফোন ও নগদ একান্ন হাজর টাকা নিয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করে আইফোনের খোঁজ পায়। পরে পুলিশ গোবিন্দগঞ্জের একটি দোকান থেকে তা উদ্ধার করে।
অর্জুন চন্দ ও ভূষণ সূত্রধর বলেন, আমাদের ঘর থেকে আড়াই ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দুই লাখ বিশ হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
সিএনজি অটোরিকশাচালক রহিম আলী বলেন, আমি সাত থেকে আট দিন আগে গাড়িটি কিনেছিলাম। বৃষ্টির জন্য বাড়ির সামনে রেখে বাড়িতে যাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই চুরি হয়ে যায় গাড়িটি। এখনও গাড়িটির সন্ধান পায়নি। এঘটনায় মামলা করবো।
প্রতিবন্ধী ফিরোজ আলী জানান, গত ২৩ রমজানে বাড়ি থেকে তার পাঁচটি গরু নিয়ে যায় চোরেরা।
গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় চুরির উৎপাত প্রতিরোধে উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামে ওপেন হাউজ ডে করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। সভায় চুরি ও মাদক বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন চুরি বন্ধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। চোর চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম