শান্তিগঞ্জে নদীগর্ভে বিলীন গ্রামীণ সড়ক, জনদুর্ভোগ

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের শান্তিগঞ্জ-আস্তমা সড়কটি উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। এই সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরের সুলতানপুর, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও, কামরূপদলং, কামরূপদলং কান্দি, আস্তমা গ্রামের মানুষজন চলাচল করেন।

বিশেষ করে সুলতানপুর, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও গ্রামের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি।

সড়কটির সুলতানপুর গ্রামের অংশ ভালো থাকলেও পার্বতীপুর গ্রামের সুমন মিয়ার বাড়ি হতে আশরাফ আলী-তৌফিক মিয়ার বাড়ি হয়ে চমক আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ভেঙে নাইন্দা নদীতে পতিত হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত হেমন্তকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নাইন্দা নদীটি খনন করায় শান্তিগঞ্জ-আস্তমা সড়কের পার্বতীপুর গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। সড়কটি পুরোপুরীভাবে ভেঙে যাওয়ায় এই এলাকার হাজারো মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুলতানপুর গ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত সড়কটি মোটামুটি ভালো আছে। তবে পার্বতীপুর গ্রামের সুমন মিয়ার বাড়ির সামন থেকে আশরাফ আলী-তৌফিক মিয়ার বাড়ি হয়ে চমক আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি একেবারে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এলাকার মানুষ জমির আইল দিয়ে হেঁটে উপজেলা সদর শান্তিগঞ্জে যাতায়াত করছেন। সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় চরম দুর্ভোগে চলাচল করছেন এলাকার জনসাধারণ। গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বয়োজ্যেষ্ঠ লোকজন খুব কষ্টে যাতায়াত করছেন।

পার্বতীপুর গ্রামের তৌফিক মিয়া জানান, একটি উন্নয়ন করতে আরেকটি উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী খনন করার কারণে আমাদের সড়কটি ভেঙে গেছে। এর আগে আমরা শান্তিগঞ্জ থেকে অটোরিক্সা-সিএনজিতে করে যাতায়াত করতে পারতাম। এখন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছি। গ্রামের কারও কোন অসুখ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। কোলে-কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। সড়কটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সরকারিভাবে সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন আমাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষজন চাঁদা তোলে কিছু অংশ আরেকজনের জমি দিয়ে উঁচু আইল দিয়েছি। এখন এই আইল দিয়েই হেঁটে আমরা চলাচল করছি।

স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী জুবায়েল হাসান জানান, আমরা খুব কষ্ট করে চলাচল করছি। প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। ঘর থেকে জুতা হাতে নিয়ে কাদামাটি মাড়িয়ে যেতে হয়। এর আগে আমরা গাড়িতে করেই যেতাম। এখন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করি। সড়কটি আমাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক। আমাদের উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু আমাদের সড়কের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকার যেন আমাদের সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করে চলাচল উপযোগী করে নেন সেই দাবি জানাচ্ছি।

ইউপি সদস্য মো. লিটন মিয়া জানান, আমার ওয়ার্ডের এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। মানুষজন চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে মারাত্মক ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয়ের কাছে আমার জোরদাবি এই সড়কটি যেন দ্রুত সময়ে সংস্কার করে এলাকার মানুষের চলাচল উপযোগী করে দেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক জানান, সড়কটি মারাত্মকভাবে ভেঙে গেছে। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের বিশেষ প্রকল্পে এই সড়কের ভাঙা অংশের কাজ ধরা আছে। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় থেকে পাস হয়ে আসলে কাজটি বাস্তবায়ন করতে পারবো। তবে এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ভাঙন এলাকায় কাজ করলে ভালো হবে। এখানে ব্লক দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করলে তার উপরে আমরা সড়কটি নির্মাণ করতে পারবো। এটা করলে সড়কটি খুব টেকসই হবে। তবে আমাদের প্রকল্পটি আশা করি খুব দ্রুতই পাস হয়ে আসবে। তার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারলে ভালো হয়।

সিলেট ভয়েস/এএইচএম