রাক্ষুসে নাইন্দা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নিশ্চিহ্নের পথে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের শতবর্ষী জনপদ সদরপুর গ্রাম। অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অব্যাহত ভাঙন থেকে বাদ যায়নি সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে অবস্থিত সদরপুর সেতুও। নদী ভাঙছে প্রতিদিন, যোগ হচ্ছে একেকজনের বসতঘর। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নাইন্দা নদীর উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে বসবাসরত প্রায় অর্ধশত পরিবারের। ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে অনেক পরিবারের মাথাগোঁজার একমাত্র ঠাঁই।
সরেজমিনে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের নাইন্দা নদীর উত্তর-দক্ষিণ অংশের তীরবর্তী সদরপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার নদীভাঙনের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এর মধ্যে ভাঙনের ফলে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে গ্রামের ৭টি পরিবারকে। অর্থাভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক বসতভিটা। একাধিক বসতভিটায় ধরেছে বড় বড় ফাটল। যেকোনো সময় ঘর ধসে যেতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণহানি।
বিলীন হওয়ার পথে এই অসহায় পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত করলেও কোনো প্রকারের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কেউ এসে তাদের খোঁজ নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তাদের। এদিকে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু সেচ প্রকল্পের নামে ভাঙন এলাকা থেকে দুটি দমকল দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে অবিরত। সবমিলিয়ে ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিশেহারা এখানে বসবাসরত পরিবারগুলো।
নদীভাঙনে ভুক্তভোগী আলমগীর মিয়া বলেন, যেভাবে নদীভাঙন চলছে তাতে আমাদের এখানে অবস্থান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বসতবাড়ি হয়তো আজ বা কাল তলিয়ে যেতে পারে। ঘর তলিয়ে গেলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমার। আমি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। জায়গা কেনার সামর্থ্যও আমার নেই। কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, কখন সবকিছু নদীতে তলিয়ে যায়! আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
নদীভাঙনের আরেক ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম বলেন, আমরা অসহায় অবস্থায় এখানে আছি। সন্তানদের নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে আমাদের। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমার স্বামী দিনমজুর। এক মেয়ে ও পাঁচ ছেলে নিয়ে বড় পড়েছি। আমাদের থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাদেরকে যেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে গত তিন বছর ধরে প্রস্তাবনা দিচ্ছি সরকারের কাছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না আসায় আমরা কিছু করতে পারছি না। সরকার টাকা বরাদ্দ দিলে আমরা কাজ করতে পারব। আমাদের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। তাদের নজরে বিষয়টি আছে। নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমেদ বলেন, নাইন্দা নদীর ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা পরিষদের নজরে আছে। এই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে একটি আবেদনও পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।