শান্তিগঞ্জে জরাজীর্ণ ভবনে অর্ধেক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক শ্রেণিকক্ষ নিয়ে চলছে পাঠদান। শ্রেণিকক্ষের অভাবে ব্যাঘাত ঘটছে লেখাপড়ায়।

সেই সাথে ভাঙা জরাজীর্ণ ভবনটিতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ হিসেবে একটি কক্ষ ব্যবহার করছেন শিক্ষকরা। বৃষ্টি এলে অফিসের এই কক্ষ বসার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অফিসের কাগজপত্র বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। ভবনের উপরের টিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি এলে অফিসেই ছাতা টানিয়ে বসতে হয়। কক্ষের অনেক জায়গায় বালতি ও ঘটি-বাটি দিয়ে টিনের চালের থেকে পড়া পানি আটকানোর চেষ্টা করে অফিসের কাগজপত্র রক্ষা করতে হয়।

অন্যদিকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র কাম শ্রেণী কক্ষের ভবনের উপরের তলায় পাঠদান করার কথা থাকলেও শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে এই ভবনের নিচ তলা সংস্কার করে সেখানেও আরো দুটি শ্রেণী কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুটি কক্ষও আবার বর্ষা মৌসুমে সাধারণ বন্যা এলেই পানিতে তলিয়ে যায়।

আড়াই হাজার বাসিন্দার গ্রাম আস্তমায় প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৫১ সালে গ্রামের লোকজন স্থাপন করেন। এরপর থেকেই এই বিদ্যালয়টিতে এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জনসংখ্যার বর্ধনে এই বিদ্যালয়টিতে আরো একটি নতুন ভবন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

তারা জানিয়েছেন, নতুন ভবন ও স্কুলের অবকাঠামো ভালো না থাকায় এই গ্রামের স্বচ্ছল অনেক পরিবারের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে পড়াশুনা করছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইটি ভবন আছে যার একটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র কাম শ্রেণীকক্ষ, অন্যটি পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কাম শ্রেণীকক্ষের নিচ তলা ফাঁকা ছিল। ২-৩ বছর আগে এই ভবনের নিচ তলার ফাঁকা অংশের চার পাশে দেয়াল তৈরি করে আরো ২টি শ্রেণীকক্ষ বানানো হয়। এই ভবনের উপর তলায় আগে ছিলো ২টি শ্রেণীকক্ষ। এখন নিচ তলার ফাঁকা অংশ সংস্কার করায় আরো ২টি কক্ষ হয়েছে। এই ৪টি কক্ষ ব্যবহার হয় শ্রেণীকক্ষ হিসাবে। এই ৪টি কক্ষের একটি কক্ষে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু শ্রেণী) শিক্ষার্থী, অপর ৩টি কক্ষে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষ হিসাবে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা।

কিন্তু অফিস কক্ষের জায়গা না হওয়ায় পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনের একটি কক্ষে শিক্ষাকরা অফিস কক্ষ হিসেবেই ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে শ্রেণী কক্ষে ২৭৫ জন শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় পুরাতন ভবনের আরো একটি কক্ষে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকরা।

অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, আসবাবপত্রের মাঝে বৃষ্টির পানির ছাপ পড়ে আছে। ভেতর থেকে উপরের অংশে শামিয়ানা টানানো আছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের টিনের চাল থেকে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি আটকানোর জন্য ব্যবহার করেন বালতি ও বিভিন্ন প্রকারের বাটি। এগুলো দিয়েই টিনের চালা থেকে পড়া পানি আটকানোর চেষ্টা করে অফিসের কাগজপত্র রক্ষা করেন শিক্ষকরা। অফিস কক্ষের অবস্থা খুবই নাজুক। উপরের চালার একটি টিনও ভালো নেই, সবগুলো টিনে জং ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে।

স্কুলের ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিহা জান্নাত তানহা ও ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সীমা আক্তার মিনহা জানায়, আমরা খুব কষ্ট করে স্কুলে লেখাপড়া করি। আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা বৃষ্টিতে ভিজে অফিস করেন। বৃষ্টি এলে অফিসে বসা যায় না।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সজীব চন্দ্র দাস জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে আরো একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। আমরা খুব কষ্ট করে ছোট-ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা জরাজীর্ণ ভবনে অফিস করে বাচ্চাদের পাঠদান করতেছি। তার পরেও শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনেও একটি কক্ষে ক্লাস করাচ্ছি। বৃষ্টি আসলেই আর সেই ভবনে থাকা যায় না। অফিসে বসলে ছাতা টানিয়েই বসতে হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী জানান, আমার বিদ্যালয়ে ২৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে ২টি ভবনের আছে যার একটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, আরেকটি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি ২ তলা ভবনের উপর তলায় ২টি কক্ষ আর নিচ তলা ফাঁকা রেখেই নির্মাণ করা হয়েছিলো। আর পুরাতন ভবনটি একেবারেই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখানে কোন ভাবেই ক্লাস করানো যাচ্ছিল না। পরে ২-৩ বছর আগে আমরা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের নিচ তলার ফাঁকা অংশ সংস্কার করে আরো ২টি কক্ষ নির্মাণ করি। এই ভবনের ৪টি কক্ষই শ্রেণী কক্ষ হিসাবে ব্যবহার করছি। তার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু শ্রেণী) শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শ্রেণী কক্ষ ও ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাকি ৩টি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষকরা পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে অফিস কক্ষ হিসাবে ব্যবহার করছি। সেখানে বৃষ্টি এলে বসা যায় না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের বিদ্যালয়ে যেন একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে দেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাছিমা আক্তার জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে ভবন সংকট থাকায় অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে হয়। সেই সাথে আমাদের শিক্ষকরাও ভাঙাচুরা ভবনের একটি কক্ষে বসতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে জরুরী ভিত্তিতে আরো একটি ভবন প্রয়োজন।

উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম খাঁন জানান, আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরো একটি নতুন ভবন খুবই প্রয়োজন। এই বিদ্যালয়ে আরেকটি ভবন নির্মাণের জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় দেওয়া আছে। এটি প্রক্রিয়াধীন। সারা দেশেই নতুন ভবন গুলো ধাপে-ধাপে নির্মাণ করা হয়। আশা করি খুব শীঘ্রই এই বিদ্যালয়ে আরেকটি ভবন স্থাপন করা যাবে।