শান্তিগঞ্জে জনপ্রিয় মুখরোচক ফল ‘মাখনা’

বর্ষা এলেই শান্তিগঞ্জের হাট-বাজারে দেখা মিলে হাওর-বিলে জন্মানো সুপরিচিত মুখরোচক সুস্বাদু ফল মাখনা। জলজ এই ফল স্থানীয়ভাবে (সিলেট অঞ্চল) ফুকল নামে পরিচিত। জেলার সর্ববৃহৎ হাওর দেখার হাওরে সবচেয়ে বেশি মিলে মাখনা ফল। শুধু দেখার হাওরেই নয় উপজেলার অন্যান্য হাওর ও বিল-ঝিলেও দেখা মিলে ব্যাপক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাখনা ফলের।

মাখনার ইংরেজি নাম Foxnut এবং বৈজ্ঞানিক নাম Euryale ferox। বিল ও হাওরে জন্মানো মাখনার গাছ লাল শাপলার মতোই তবে কাঁটাভরা। এদের পাতা বিশাল। ভিক্টোরিয়া অ্যামাজনিকা প্রজাতির পর উদ্ভিদরাজ্যে এরাই দ্বিতীয় বৃহত্তম। এদের ফুল গোলাপি রঙের। আকারে শাপলার চেয়ে ছোট। ফুল ফোটে শীতের শেষে। কাঁটাভরা ফলে থাকে অসংখ্য বীজ এবং বীজগুলো খাবার যোগ্য।

জানা যায়, মাখনা ফলের রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিগুণ। মাখনার বীজগুলোকে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন এবং খনিজ লবণ রয়েছে। এই উদ্ভিদের বীজগুলো শারীরিক শক্তিবর্ধক এবং পাতা বাত রোগের জন্য উপকারী বলে থেকে জানা যায়।

বহুল পরিচিত জলজ ফল মাখনা হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের কাছে সুস্বাদু ফল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। চৈত্র মাসের ২০-২৫ তারিখ থেকে হাওরের পানিতে এই ফল জন্ম নিতে শুরু করে। প্রতি বছরের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাসেই মাখনা ফল পাওয়া যায়। হাওর-বিলে জন্মানো এসব ফল তুলে এনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন মাখনা ব্যবসায়ীরা। আকারভেদে একটি মাখনা ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। বাহ্যিকভাবে দেখতে কুৎসিত মাখনা ফলের ওপর থেকে মোটা আবরণ ফেলে দেওয়ার পরই দেখা মেলে বাদামের দানার মতো বিন্দু বিন্দু ফলের অস্তিত্ব।

স্থানীয়রা বলছেন, এই ফলটি খুবই উপকারী। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নির্ভেজাল এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে স্থানীয়রা ফলটিকে শখের মুখরোচক হিসেবেই খেয়ে থাকেন। পাশাপাশি বাজার থেকে কিনে নিয়ে বিদেশে আত্মীয়স্বজনদের কাছেও অনেকেই পাঠিয়ে থাকেন। তবে এই ফল রাজধানী ঢাকাতেও পরিচিতি লাভ করেছে।

পাগলা বাজারের মাখনা ফল বিক্রেতা নাসির মিয়া ও আছির মিয়া বলেন, হাওর থেকে পাইকারি দরে কিনে এনে পাগলা বাজারে এসব ফল বিক্রি করি। বাজারে আনার সঙ্গে সঙ্গে এই ফল কিনতে লোকজন ভিড় করেন। এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

পাগলা বাজারে মাখতা কিনতে আসা সাব্বির আহমদ ও লিটন মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই মাখনা আমার প্রিয় ফল। ছোটবেলায় বাজারে এলে মাখনা পেলেই কিনতাম। দামও ছিল ১ থেকে ৫ টাকার মধ্যে। এখনও মাখনা পেলে শখের বশে কিনি। সময়ের সাথে দাম এখন বেড়েছে। তবে স্বাসটা একই রয়ে গেছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমদ বলেন, বিভিন্ন হাওর-বিলে প্রতি বছর মাখনা ফল জন্ম নেয়। স্থানীয় মানুষ ফলটিকে শখের বশে খেয়ে থাকেন। নির্দেশনা পেলে এই ফলের জাত সম্প্রসারণে কাজ করা হবে।