লাশ বহনের জন্য প্রস্তুত খাটিয়া। পাড়ার মসজিদের মাইকে ও সমস্ত এলাকাজুড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঘোষণা করা হয়েছে জানাজার নামাজের সময়সূচি। বাড়িভর্তি শোকাহত লোকজন। দাফনের জন্য গোরস্থানে খোঁড়া হয়েছে কবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি জানাজার নামাজ, করা হয়নি দাফনও। কারণ যে ব্যক্তির জন্য এমন শোকাবহ আয়োজন, লাশ তার নয়, অন্যজনের।
এমন ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী গ্রামে। এই গ্রামের মরহুম জমসিদ আলীর বড় ছেলে আফছর মিয়া (৪১) ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে লিভার ক্যান্সারজনিত কারণে গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার অপর ভাই মো. এমরান মিয়াও সেখানে (গ্রিসের এথেন্সে) ছিলেন। মৃত্যুর ৪ দিন পর লাশ দেশে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি (মো. এমরান মিয়া) দেশে চলে আসেন।
গতকাল শুক্রবার (১০ মার্চ) লাশ দেশে আসার কথা ছিল। মারা যাওয়া আফছর মিয়ার সাথে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। সে ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িও এসেছে। লাশ পেয়ে আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ব্যবস্থা করেছিলেন জানাজার নামাজের। ঘোষণা দেওয়া হয় মসজিদের মাইকে। খোঁড়া হয় কবর। কিন্তু লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাঁধে বিপত্তি। এ লাশ যে আফছর মিয়ার নয়!
পুলিশ ও আফছর মিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যে মরদেহটি মরহুম আফছর মিয়ার বাড়িতে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ২০ মিনিটে এসে পৌঁছেছে সে মরদেহ জালাল মিয়া (৫২) নামের এক ব্যক্তির। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম শফিক উদ্দিন। তিনিও গ্রিস প্রবাসী ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আগামী ১৩ মার্চ তার লাশ দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু ভুলবশত আফছর মিয়ার নাম সম্বলিত স্টিকারটি জালাল মিয়ার কফিনে লাগিয়ে দেওয়ার কারণে একজনের লাশ আরেকজনের ঠিকানায় তারিখ পরিবর্তিত হয়ে চলে এসেছে। আর জগন্নাথপুরের আফছর মিয়ার লাশ এখনও গ্রিসের এথেন্সে রয়ে গেছে। আগামী ১৩ মার্চের ফ্লাইটে তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারেরর সদস্যরা।
আফছর মিয়ার ভাগ্নে তোফায়েল আহমদ কামরান বলেন, আমার বড় মামার লাশ আসার কথা শুনে লাশ রিসিভ করতে আমি শুক্রবার দিনের বেলা ঢাকা এয়ারপোর্টে যাই। সেখানে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশে রওয়া দিয়ে রাত ৩টা ২০ মিনিটে বাড়িতে এসে পৌঁছাই। এর মধ্যেই মাইকে জানানো হয় যে জানাজার নামাজ কখন হবে। ভোর থেকে গোরস্থানে কবর খোঁড়া হয়। সকাল ১০টায় যখন লাশবাহী গাড়ি থেকে লাশ নামিয়ে কফিন খোলা হয়, তখন দেখা যায় লাশ আমার মামার নয়। তারপর পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে লাশটি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির জালাল মিয়ার।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে ফোর্সসহ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যাই। অনেক চেষ্টা করে মরহুম জালাল উদ্দিনের বাড়ির ফোন নম্বর বের করে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ লাশ হস্তান্তর করা হবে। দামোধরতপী গ্রামের মরহুম আফছর মিয়ার লাশ এখনও আসেনি। সমস্যাটা হয়েছে গ্রিসে। আগামী ১৩ তারিখ তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে।