টানা বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে ক্রমশ বাড়ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি হাওরের পানি। ইতোমধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানির ছুঁই ছুঁই অবস্থা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে বিরামবিহীনভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে দু’চার দিনের মধ্যেই তলিয়ে যেতে পারে এসব এলাকা। হতে পারে বন্যা।
এমন পরিস্থিতে বার বার ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে চিন্তিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যদি বন্যার অবস্থা তৈরি হয় যেনো সহজেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারেন সেজন্য অনেকেই মনে মনে খুঁজ নিচ্ছেন আশ্রয় কেন্দ্রের। গ্রামীণ কৃষকরা গবাদি পশু ও গোলায় তুলা ধান নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তায় পড়েছেন। কেউ কেউ তুলনামূলক উঁচু ও শুকনো জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন ধান ও গরু-ছাগলকে।
যদিও, পানি উন্নয়ন বোর্ড সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার সকাল থেকে সারাদিন শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। বিকাল ২টায় উপজেলার আস্তমা, পশ্চিমপাড়া হোসেনপুর, নবীনগর, আক্তাপাড়ার রসূলপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তা-ঘাটে পানি উঠতে শুরু করেছে। কোনো রাস্তায় হাঁটুজল, কোনোটায় সবেমাত্র পানি উঠেছে। এসব এলাকায় সাধারণ মানুষজন নৌকা দিয়ে চলাচল করছেন। জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের রাস্তার একাধিক স্থানে দিয়ে প্রবল বেগে স্রোত বয়ে চলেছে। রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত পানি। এ গ্রামের মানুষ নৌকায় করে চলাচল করছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে পশ্চিম কান্দিগাঁও গ্রামের স্কুলবাড়ির রাস্তার একাংশ, দরগাপাশা ইউনিয়নের আক্তাপাড়া গ্রামের শেষাংশ থেকে রসুলপুর-ইসলামপুর গ্রামের রাস্তার প্রায় সবখানেই পানি। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের হোসেনপুর, ছোনানপুর ও নিদনপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম দক্ষিণাংশ পুরোটা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কিছু কিছু বাড়িতেও পানি উঠে গেছে।
এদিকে পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বেশ ক’টি রাস্তা ডুবে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কালপরশুর মধ্যে বাড়িঘরও তলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শিমুলবাক, পাথারিয়ার, পশ্চিম বীরগাঁও, পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোও একই ভাবে প্লাবিত হচ্ছে।
ইনাতনগর গ্রামের সাহেদ মিয়া, আস্তমা গ্রামের সায়েফ আহমদ, নবীজ আলী, আবদুল খালিক, মাসুক আলী ও কান্দিগাঁও গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তা তো ডুবেই গেছে। এভাবে বাতাস আর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে দ্রুত বাড়িঘরেও পানি উঠে যাবে। গবাদি পশু ও ধানের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। যদি পানি বাড়ে এসব নিয়ে কোথায় যাবো। মনে মনে আশ্রয়ের স্থান খুঁজছি এখনই।
সুনামগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাওবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো সুনামগঞ্জ জেলায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সে. মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হচ্ছে। বড় ধরণের বন্যার কোনো আশঙ্কা করছেন না তিনি। তবে, সুনামগঞ্জের তুলনামূলক নিচু জায়গায় কিছুটা পানি বাড়তে পারে। তাদেরকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, ‘বন্যা বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। বন্যা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। একটি কন্ট্রোল রুল চালু করেছি। আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য বৈঠক করেছি। আজ সন্ধ্যায় উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের আলোচনায় বসবো। এছাড়াও বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’